দুর্বল: ফুট-ব্রিজের নীচের অংশে সম্পূর্ণ খসে গিয়েছে পলেস্তারা। দুর্বল কংক্রিটের ব্রিজ কাঁপে মানুষের চাপে। —নিজস্ব চিত্র।
প্ল্যাটফর্ম থেকে মুখ তুলে উপরে তাকালে দেখা যায় একটু একটু করে পলেস্তারা খসছে ফুট-ওভারব্রিজের। সকালবেলা লোকাল ট্রেন থামলে হুড়মুড় করে ফুটব্রিজে ওঠেন যাত্রীরা। সে সময় থরথর করে কাঁপে কংক্রিটের ব্রিজ। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ফুটব্রিজের নীচের অংশে চাঙড় খসে বেরিয়ে পড়েছে লোহার রড— তাও মরচে ধরা। নীচেই ওভারহেড তার। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা— দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটা শাখার ঝাড়গ্রাম স্টেশনের ছবি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালের স্টিল, ইস্পাত বা লালমাটি এক্সপ্রেস থামার পরেই ব্যপক ভিড় হয় ঝাড়গ্রাম স্টেশনে। বিকেলে ও রাতের ট্রেন থামলেও অপরিসর ফুটব্রিজে বেসামাল ভিড়ে নাকাল হন যাত্রীরা। ঝামেলা এড়াতে অনেকে আবার ফুটব্রিজে পা-ই দেন না। বিপজ্জনক ভাবে রেল লাইন পেরিয়েই যাতায়াত করেন।
অথচ চার বছর আগে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে যাত্রীদের জন্য দ্বিতীয় একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। আলাদা জেলা হওয়ার পরে সব দিক দিয়েই জেলাশহর ঝাড়গ্রামের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে। পুজোর ছুটিতে পর্যটনের মরসুমে প্রতিদিনই পর্যটক বেড়াতে আসছেন।
ঝাড়গ্রাম স্টেশনে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী এই ফুটব্রিজ ব্যবহার করেন। শহরের উত্তর ও দক্ষিণ দু’টি প্রান্তের বাসিন্দারাও চট জলদি হাঁটাপথে যাতায়াতের জন্য এই ফুটব্রিজ ধরে দু’দিকের গন্তব্যে যান। অথচ দু’টি (২ ও ৩) প্ল্যাটফর্মের মাঝে ওভার ব্রিজটির মূল কাঠামোর ঢালাই অংশটি থেকে বিপজ্জনক ভাবে পলেস্তারা খসে গেলেও নির্বিকার রেল প্রশাসন।
রেল সূত্রের খবর, বর্তমান ফুটব্রিজটি স্বাধীনতার আগে তৈরি হয়েছিল। আগে সেতুর হাঁটার জায়গাটিতে (ডেক) কাঠের স্লিপার ছিল। পরে সত্তর ও নব্বইয়ের দশকে সেতুটির ঢেলে সংস্কার করা হয়। ওভারব্রিজের হাঁটার পথটি (ডেক) কংক্রিটের করা হয়। আগে ফুটব্রিজটি ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম প্রান্তের প্রধান টিকিট ঘর থেকে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরে ৪ নম্বর প্রান্তের টিকিট ঘর পর্যন্ত ওভারব্রিজটি বাড়ানো হয়। এখন ওভারব্রিজটি প্রায় ১২০ মিটার লম্বা এবং প্রায় ২ মিটার চওড়া। দু’প্রান্তের ৭৮ টি খাড়াই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়েন বয়স্করা।
ঝাড়গ্রাম শহরের প্রবীণ বাসিন্দা প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ অনিমেষ দাশগুপ্ত বলেন, “১৯৪৯ সালে ছোটবেলায় তখন খুবই অপরিসর কাঠের স্লিপার দেওয়া ওভার ব্রিজে চড়তাম। একই জায়গাতে এখন যে ওভারব্রিজটি রয়েছে সেটি বার কয়েক সংস্কার করে একেবারে নতুন ভাবে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেতুটির মাঝের অংশের তলাটি দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। এখন প্ল্যাটফর্মে হাঁটার সময় উপরে তাকালেই গা শিউরে ওঠে। অবিলম্বে সেতুটির ওই অংশের সংস্কার করা দরকার।”
ইতিকথা
• প্রায় ৮৫ বছর আগে ঝাড়গ্রাম স্টেশনের ১ থেকে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাতায়াতের জন্য ফুটব্রিজ তৈরি হয়।
• সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে বার কয়েক সংস্কার করা হয় ফুটব্রিজের।।
• বছর সাতেক আগে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ব্রিজ বাড়ানো হয়।
•২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সেতুর সংযোগকারী মাঝের অংশটির তলায় চাঙড় খসে লোহার রড বেরিয়ে গিয়েছে।
• সমস্যা খতিয়ে ব্রিজ মেরামতির আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
খড়্গপুরের বাসিন্দা নিত্যযাত্রী অমর মৈত্র একটি সমবায় ব্যাঙ্কের ঝাড়গ্রাম শাখার কর্মী। সপ্তাহে ৬ দিন ট্রেনে যাতায়াত করেন অমরবাবু। তিনি বলেন, “ফাঁকা সময়ে হাঁটলেও ফুট ব্রিজটি কাঁপতে থাকে। নীচ থেকে উপরে থাকালে দেখা যায়, সেতুটির একাংশের বেহাল দশা। মুম্বইয়ের ঘটনার শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে ওই বেহাল অংশের সংস্কার করা দরকার।”
রেল সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে দ্বিতীয় একটি ফুটব্রিজ তৈরির প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। নতুন ফুট ব্রিজটি সাড়ে ৩ মিটার চওড়া করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুর ডিভিশনের এক রেল আধিকারিক জানান, দু’টি প্ল্যাটফর্মের মাঝে দু’টি লাইন ও ওভার হেড তার রয়েছে। ব্রিজের ওই অংশটি সংস্কার করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “ফুটব্রিজ বিপজ্জনক হলে অবশ্যই রেলের ইঞ্জিনয়াররা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে আপসের কোনও জায়গা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy