ঝাড়গ্রাম শহরের দোকানে বিকোচ্ছে বার্নার যুক্ত সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র
কেরোসিন অমিল। তাই বাজার থেকে বার্নার যুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার (কুকটপ সিলিন্ডার) কিনেছিলেন বছর সত্তরের সিদ্ধেশ্বরী সিংহ। বৃহস্পতিবার সেই সিলিন্ডারের বার্নারে রান্না করতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। আচমকা সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করে আগুন লেগে যায়। আগুনে পুড়ে যায় তাঁর বাড়ির কিছু আসবাবপত্র। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঝাড়গ্রাম শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনডিহির বাসিন্দা সিদ্ধেশ্বরীদেবী। তবে খোলা বাজার থেকে সাশ্রয়ের জন্য কেনা এ সব কুকটপ সিলিন্ডার কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
দমকল কর্তৃপক্ষের দাবি, খোলা বাজারে যে সব ‘কুকটপ গ্যাস সিলিন্ডার’ (বার্নার লাগানো তিন কিলোগ্রাম ও পাঁচ কিলোগ্রাম ওজনের সিলিন্ডার) বিক্রি হচ্ছে, সেগুলির বেশির ভাগই বেআইনি। এই সমস্ত সিলিন্ডার খালি হওয়ার পরে স্থানীয়ভাবে গ্যাস ‘রিফিল’ করা হয়। তার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সিলিন্ডারগুলিতে লিক থেকে যায়। দমকল কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন সিলিন্ডারে রান্না করলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এই সব কুকটপ সিলিন্ডার।
শুধু সিদ্ধেশ্বরীদেবী নন, বিপদের কথা চিন্তা না করে স্রেফ সাশ্রয়ের কথা ভেবে ঝাড়গ্রামের অনেকেই এমন কুকটপ সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। গ্যাস শেষ হয়ে গেলে এই পোর্টেবল সিলিন্ডারে ফের গ্যাস ভরে নেওয়া যায়। তবে দমকলের বক্তব্য, এই ধরনের সিলিন্ডার ব্যবহার মোটেই নিরাপদ নয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনাতেও ঠিক সময়ে দমকল এসে না পৌঁছলে সিলিন্ডারটি ফেটে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল বলে দাবি দমকল কর্তৃপক্ষের। সিদ্ধেশ্বরীদেবীর কুকটপ সিলিন্ডারটি বাজেয়াপ্ত করেছে দমকল।
সিদ্ধেশ্বরীদেবীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী নারায়ণ সিংহের মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। নিঃসন্তান সিদ্ধেশ্বরীদেবী অ্যাসবেস্টসের মাটির বাড়িতে থাকেন। এখনও সরকারি গ্যাসের সংযোগ পাননি তিনি। তাই কেরোসিনের স্টোভেই রান্না করতেন। সিদ্ধেশ্বরীদেবী জানান, এখন বাজারে কেরোসিনও অমিল। চড়া দামে কেরোসিন কিনতে হচ্ছে। সেই কারণে খোলা বাজার থেকে কুকটপ গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছিলেন তিনি। সিলিন্ডার খালি হওয়ার পরে বাজারে রিফিলও করানো হয়েছিল। এ দিন সকালে চা-জলখাবার বানানোর সময় আচমকা সিলিন্ডারে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে যায়। ভয় পেয়ে সিলিন্ডারে জল ঢালেন। কিন্তু আগুন নেভেনি। বৃদ্ধার চিত্কারে ছুটে আসেন তাঁর এক ভাইপো পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি অরুণ দণ্ডপাট। তিনি বাঁশের লাঠি দিয়ে কোনও মতে জ্বলন্ত সিলিন্ডারটিকে বাড়ির বাইরে উঠোনে বের করে আনেন। কিন্তু সিলিন্ডারটি দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। পাশের একটি বাড়ির দাওয়ার বাঁশেও আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে দমকল এসে আগুন নেভায়। সিদ্ধেশ্বরীদেবী বলেন, “সপ্তাহখানেক আগে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছি। কেরোসিনও পাচ্ছি না। তাই বাজার থেকে কুকটপ সিলিন্ডার কিনেছিলাম।” ঘটনার পরে আতঙ্কে রয়েছেন বৃদ্ধা।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের দুর্গাপুরের চিফ এরিয়া ম্যানেজার অনির্বাণ রায়ও বলছেন, “খোলা বাজারে যে সব কুকটপ সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে তা মোটেই নিরাপদ নয়। ওই সিলিন্ডার ব্যবহার করা বেশ বিপজ্জনক।” অনির্বাণবাবু জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এলপিজি গ্রাহক হয়ে সেই সংস্থার সিলিন্ডার ব্যবহার করার জন্য সব সময়ই গ্রাহকদের সচেতন করা হয়।” বেআইনি কুকটপ সিলিন্ডারের ব্যবহার কমাতে কেন সংস্থা উদ্যোগী হচ্ছে না? ইন্ডেন সূত্রে খবর, কয়েকদিনের মধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলার ইন্ডেন গ্রাহকদের জন্য পাঁচ কিলোগ্রামের সিলিন্ডারও সরবরাহ করবে বলে জানান তিনি। ফলে যে সব গ্রাহকের পরিবারে কম সদস্য বা কম গ্যাস খরচ হয়, তাঁরা উপকৃত হবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy