মন্দিরময় পাথরা। ফাইল চিত্র।
অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু জমির আনুষ্ঠানিক অধিগ্রহণ হয়নি। আবার জমি চাষির হাতেও নেই। ফলে, এক দিকে যেমন থমকে রয়েছে পাথরা এলাকায় মন্দির উন্নয়নের কাজ, অন্য দিকে ক্ষতিপূরণ না মেলায় সমস্যায় চাষিরাও। জমি হাতে না থাকায় তা থেকে কোনও আয় হচ্ছে না জমিদাতাদের। পরিস্থিতি দেখে এ বার ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠাতে চলেছেন ওই জমির মালিকরা। এ নিয়ে আজ, শনিবার পাথরা গ্রামে এক প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে আইনি নোটিস পাঠানোর বিষয়টি ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন পাথরা পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক মহম্মদ ইয়াসিন পাঠান।
মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে সদর ব্লকের পাথরা গ্রামের রয়েছে বাংলার সুবাদার আলিবর্দি খাঁর সমসাময়িক এক গুচ্ছ প্রাচীন মন্দির। মূলত ৬৫ বছরের ইয়াসিন পাঠানের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলেই ২০০৩ সালের জুলাইয়ে পাথরার ৩৪টি মন্দির ও সংলগ্ন ২৫ বিঘা (৯ একর ৯৭৫ ডেসিমেল) জমি (যার মধ্যে পতিত জমি ও পুকুর ও ডোবা রয়েছে) অধিগ্রহণ করে এএসআই। তারপর জমিদারের কাছারি বাড়ি-সহ ১৯টি মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু জমি মালিকদের বাধায় পাথরায় পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণের কাজ গত তিন বছর ধরে থমকে রয়েছে। অভিযোগ, ওই সমূহ জমির ২৮ জন মালিককে এখনও জমির দাম অথবা ক্ষতিপূরণ মেটানো হয়নি। এই ২৮ জনের সিংহভাগই স্থানীয় চাষি। তাঁরা চান, জমির জন্য
উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে তবেই পাথরার মন্দির ও আশপাশের এলাকার উন্নয়ন হোক।
স্থানীয় চাষি মনোহরকান্তি মজুমদার, পরেশ দলুই, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের বক্তব্য, ‘‘এএসআই নিয়ে নেওয়ায় গত সাড়ে ১৪ বছর আমরা নিজেদের জমিতে কিছু করতে পারিনি। হয় জমির দাম মিটিয়ে দেওয়া হোক, নয়তো আমাদের জমি ফেরত দেওয়া হোক। এএসআই তাদের বোর্ড খুলে নিয়ে যাক।’’ পাথরা পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক মহম্মদ ইয়াসিন পাঠান, সহকারী সম্পাদক জয়ন্তকুমার সামন্তরাও বলছেন, “প্রায় দেড় দশক ওই জমি পড়ে রয়েছে। মন্দিরগুলির সংস্কার ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আমরা আন্দোলনে নামছি।’’
এএসআই সূত্রে খবর, পাথরায় জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কার্যত চুপ হয়ে যায়। শেষে ইসায়িন পাঠানদের লাগাতার চাপের ফলে, গত বছর জমির দাম নির্ধারণ হয়। কিন্তু তারপরও এএসআইকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জমি হস্তান্তর করেনি জেলা প্রশাসন। আনুষ্ঠানিক ভাবে জমি হস্তান্তরের জন্য এএসআই থেকে বেশ কয়েকবার জেলাপ্রশাসনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (কলকাতা চক্র) এক আধিকারিক মানছেন, “জমির কারণেই সমস্যা হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলেন, “ওই জমি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি। এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি।’’ যা শুনে ইয়াসিন পাঠানদের বক্তব্য, “প্রশাসনের এই মনোভাবের কারণেই আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy