মেদিনীপুরের উদয়পল্লি। —নিজস্ব চিত্র।
বামফ্রন্ট চলে যাওয়ার পরে বাংলার রাস্তার হাল পাল্টে গিয়েছে। বারে বারেই এমন দাবি করেন তৃণমূল নেতারা। গ্রাম বাংলার রাস্তা তৈরি ও সংস্কারে সাম্প্রতিক সময়েও ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’র মতো প্রকল্প নিয়েছে তৃণমূল সরকার। তবে তারপরেও এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে খারাপ রাস্তা।
পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরের আইমা থেকে ডলং যাওয়ার রাস্তার মতো বহু গ্রামীণ রাস্তাই সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় ডেবরা, খড়্গপুর-২ ব্লকে রাস্তার উপরে ধান চারা রোপন করে অবরোধ কর্মসূচিও হয়েছে। পিংলা ব্লকের গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা তো খুবই খারাপ। পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, "আমাদের এলাকার মাটি নরম। রাস্তা গড়লেও টেকে না। রাস্তার জন্য যে টাকা পেয়েছি তাতে রাস্তা গড়েছি। কিন্তু অন্য ব্লক যে টাকা পেয়েছে আমরাও সেই টাকা পেয়েছি।" তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, রাস্তা তৈরির টাকা চুরি করা হয়েছে।
দাঁতন ২ ব্লকে তুরকা, সাবড়া, সাউরী এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা চলার অযোগ্য। নারায়ণগড় ব্লকের রানিসরাই, বেলদা ১, নারমা, গ্রামরাজ পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা বেহাল। নারায়ণগড়ের ঠাকুরচক-খালিনা, বাখরাবাদ-খালিনার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। গত পাঁচ বছর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড না থাকা কেশিয়াড়ি ব্লকে ভসরা-গোপীনাথপুর, নছিপুর-জকপুর, খকরা-বহনাবাজার, চাকলা-মুক্তাপুর রাস্তাগুলি চলার অযোগ্য। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে গড়বেতা ১ ব্লকের কয়েকটি গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হলেও ভোট বাজারে তা থমকে গিয়েছে। গোয়ালতোড় ও চন্দ্রকোনা রোড ব্লকেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের অভাবে বেহাল। গোয়ালতোড়ের পাথরপাড়া অঞ্চল, চন্দ্রকোনা রোডের নলবনা পঞ্চায়েত এলাকায় এখনও ভরসা সেই মাটির রাস্তা।
ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের রাস্তা থেকে মোরাম উঠে গিয়েছে। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী প্রশান্ত পাল বলছিলেন, “বর্ষাকালে হেঁটে চলাচল করাও সমস্যা হয় বলে গ্রামবাসীরা অনেকে জানিয়েছেন।” ক্ষোভ চন্দ্রকোনা-দাসপুরেও। চন্দ্রকোনার মনোহরপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংচা (মণ্ডলপাড়া) থেকে খাঁপুর তিন কিলোমিটার মোরাম রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা হয়। তবে তারপরেও সেখানে দু’ঝুড়ি মোরামও পড়েনি বলে অভিযোগ।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক রাজ্যের শাসক দলের অনুকূলে রাখতেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’র কাজ শুরু হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের আগেও ‘পথশ্রী’র রূপায়ণে জোর দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির দাবি, ‘‘অনেকগুলি রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা তৈরির এত বড় প্রকল্প আগে কখনও হয়নি।’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় তা মানছেন না। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভোট এলেই পুরনো প্রকল্পকে নতুন মোড়কে সামনে আনা হয়।’’
ঝাড়গ্রামের পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা আলাদা। গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রচুর রাস্তা সংস্কার হয়েছে। নতুন করে তৈরি হয়েছে একাধিক রাস্তা। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এই জেলায় তৃণমূল লিখেছিল, ‘ঝকঝকে রাস্তা/ চকচকে আলো/ জনগণ বলছে তৃণমূলই ভাল।’ তবে সেই দাবির সঙ্গে অবশ্য বাস্তবের মিল আস্তে আস্তে কমছে।
ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ এলাকায় বহু রাস্তা খারাপ। বেলিয়াবেড়া ব্লকের কুলিয়ানা গ্রামে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের আদিবাড়ি। সেখানকার রাস্তাও খানাখন্দে ভরা। ওই ব্লকের গোয়ালমারা থেকে তপসিয়া পর্যন্ত রাস্তাটি ভীষণই খারাপ। প্রচারে গিয়ে এখানেও বেহাল রাস্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীদের। ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী চিন্ময়ী মারান্ডি বলছেন, ‘‘মানুষজনকে বোঝাচ্ছি, আগে তো চলার পথই ছিল না। মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপযুক্ত রাস্তা হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর দাবি, ‘‘তৃণমূল সরকারের আমলে জেলায় সবচেয়ে বেশি রাস্তা তৈরি হয়েছে।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘রাস্তার যে জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার অর্ধেক তৃণমূল নেতাদের পকেটে ঢুকেছে। ’’
তথ্য সহায়তা: কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, বিশ্বসিন্ধু দে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy