শহিদ মাতঙ্গিনী স্টেশনের ফুটব্রিজ গত মার্চে এমন হালে ছিল। অভিযোগ, নামমাত্র মেরামত করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
জেলের ট্যাঙ্ক ভেঙে বর্ধমান জংশন স্টেশনে বুধবার তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ১৩৩ বছরের পুরনো ওই ট্যাঙ্কের রক্ষণাবেক্ষণ আদৌও ঠিক মতো হত কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর পরে। ওই খবর সমানে আসার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক স্টেশনের বেহাল দশা এবং নিরাপত্তার অভাব নিয়ে চিন্তা জেগেছে যাত্রীদের একাংশের মধ্যে। নিত্যযাত্রীদের সংগঠনের দাবি, কিছু স্টেশনের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে একাধিক বার রেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তাতে তেমন সাড়া মেলে না। আবার কখনও দায়সারা ভাবে কাজ করা হয় বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরে জেলায় রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেলের পাঁশকুড়া–হলদিয়া–দিঘা রুট। এই একাধিক রেল স্টেশনের হাল নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন জনপ্রতিনিধি থেকে দক্ষিণ পূর্ব রেলের পাঁশকুড়া–হলদিয়া–দিঘা রেলওয়ে ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা। এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হল পাঁশকুড়া। এই স্টেশনে ওভারব্রিজের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর ফলে ফুটব্রিজের উপর চাপ পড়ে সাংঘাতিক। এর পাশাপাশি, রেলের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকে যাওয়ার পর অনেক সময় ঘোষণা শুরু হয়। এর ফলে অনেক সময় রেললাইন দিয়েই পারাপার করতে বাধ্য হন যাত্রীদের একাংশ। এক যাত্রী অনিল হাঁসদা বলেন, ‘‘১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৪ নম্বরে যাওয়ার আগেই ট্রেন ঢুকে পড়ে। তখন লাইন দিয়ে পার হতে হয়।’’
পাঁশকুড়া থেকে হলদিয়া রুটে ১৩টি স্টেশন রয়েছে। প্রায় প্রতিটি স্টেশনের পরিকাঠামো নিয়েই নানা অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শহিদ মাতঙ্গিনী স্টেশনে। সেখানে ফুটব্রিজের কংক্রিট ভেঙে রড বেরিয়ে পড়েছে। সিঁড়ির টাইলসগুলিও নড়বড়ে। রঘুনাথবাড়ি, বরদা স্টেশনে ৪ নম্বর লাইনে যেতে হলে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াগনের নীচ দিয়ে যেতে হয়। রাজগোদায় ছাউনি নেই। কেশবপুর, মহিষাদল, হলদিয়া স্টেশনেও একই ধরনের সমস্যা। কোথাও ছাউনি নেই, কোথাও আলো জ্বলে না। হেঁড়িয়া স্টেশনে শৌচালয় নেই। পর্যটনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিঘা রেল স্টেশনের পরিকাঠামোও বেহাল। পাঁশকুড়া– হলদিয়া–দিঘা রেলওয়ে ওয়েলফেয়ার কমিটির সম্পাদক সরোজ ঘড়া বলেন , ‘‘রেলের আধিকারিকদের কাছে একাধিকবার এই সব বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিপদ হতেই পারে— এই মর্মে রেলমন্ত্রকেও টুইট করা হয়েছে। অথচ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
স্টেশনগুলির অবস্থা নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে জনপ্রতিনিধিরাও। গত ৩০ অক্টোবর কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী দক্ষিণ পূর্ব রেলের ডিভিশনাল ম্যানেজারকে চিঠি লিখেছিলেন। তাতে দিঘা ও দেশপ্রাণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম সারফেসের উন্নতি এবং কাঁথিকে অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় অমৃত স্টেশন হিসেবে নির্মাণের দাবি করেন। তাঁর ছেলে তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীও খড়্গপুরের ডিআরএমকে চিঠি লিখেছিলেন বিভিন্ন দাবি নিয়ে। যার মধ্যে ছিল বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কিছু এক্সপ্রেস
ট্রেন চালু।
বিভিন্ন পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা নিয়ে সরব হয়েছেন ডিভিশনাল রেলওয়ে ইউজার্স কনসাল্টেটেটিভ কমিটি মেম্বার তথা প্রাক্তন বন্দরকর্তা অমল দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক বৈঠকে ফুট ব্রিজ সমস্যা, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে গাফিলতি এবং বেশ কিছু স্টেশনের পরিকাঠামগত উন্নতির দাবি জানিয়েছি আমরা।’’
এই জেলার যাত্রীদের প্রশ্ন, বর্ধমানের মতো দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত কি রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশনের সমস্যাগুলির দিকে নজর দেবেন না? এ বিষয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেলের সিনিয়র ডিসিম আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগগুলি অবশ্যই খতিয়ে
দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy