মাস্কের বালাই নেই। ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথার মোড়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
পুরসভার সমীক্ষা অনুয়ায়ী ঝাড়গ্রাম শহরে এখনও আঠারো বছরের ঊর্ধে ১১ হাজার ৩২৭ মানুষ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় পাননি। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, শহরে ১১৯.৫ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ় নিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, শহরের বাইরে ৩৯ হাজার ৬৪৭ জন প্রতিষেধক কী ভাবে শহরে প্রতিষেধক নিলেন।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম পুরসভায় ৬১ হাজার ৮০৮ জন প্রথম ডোজ় নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ৩০ হাজার ৯৭ জন। পুরসভার সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮ বছর ও তার উপরে শহরে প্রথম ডোজ় নিয়েছেন ২২ হাজার ১৬১ জন। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ২১ হাজার ১৬০ জন। শহরে ১৮ ও তার উপরে ৪৯ হাজার ৮৬০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। তাহলে ৩৯ হাজার ৬৪৭ জন কোথা এসে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় নিলেন? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘বাকি কেন রয়েছে, এত সংখ্যা বেশি হল কেন এর উত্তর পুরসভা দেবে। এতজন কারা পেল তা পুরসভা দেখুক। আমাদের বাকি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আমরা তা দিয়ে শেষ করে দেব। ’’ তবে পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক তুষারকান্তি সৎপথী জানাচ্ছেন, ‘‘প্রথম দিকে ভোটকর্মী ও সুপার স্প্রেডাররা প্রতিষেধক নিয়েছেন। তাই সংখ্যাটা বেড়েছে।’’
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভোটকর্মীরা প্রতিষেধক নিলেও সংখ্যা ৩৯ হাজার হওয়ার কথা নয়।’’ তবে শহরে প্রতিষেধক দেওয়া নিয়ে কুপন বিলি করা হয়েছিল। তাহলে সেই কূপনেই কি ‘ভূত’ রয়েছে? উঠছে গুঞ্জন।
কিছুদিন আগে ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সন কবিতা ঘোষ এসে জানতে পারেন শহরে বহু মানুষজন প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় পাননি। শহরে কতজন প্রতিষেধক পাননি তা জানতে ৬ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায় ১১ হাজার ৩২৭ জন প্রতিষেধক এখনও নেননি। পুরসভার চেয়ারপার্সন হিসেবে কবিতা দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক কুপন বিলি করা হয়েছিল। সেই কূপন দেখিয়ে অনেকেই প্রতিষেধক পান। কিন্তু কোন ওয়ার্ডের কতজনকে কুপন দেওয়া হয়েছিল সেই তথ্য পুরসভার হাতে নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, কেবল প্রতিষেধক ও প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মীদের ব্যবস্থা আমরা করছি। কে কুপন বিলি করেছে না কি অন্য করেছে তা আমাদের জানা নেই।’ তবে শহরে প্রতিষেধক দান শিবির গুলির দায়িত্বে রয়েছে পুরসভা। শহরে সবচেয়ে বেশি প্রথম ডোজ় বাকি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৩০৩ জন এখনও প্রথম ডোজ় নেননি। এ ছাড়াও ১, ২, ৪, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৬, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড গুলিতে পাঁচশোর বেশি আঠারো ঊর্ধ্বদের প্রথম ডোজ় বাকি।
বিগত পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য কল্লোল তপাদার এখন পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন। কল্লোল বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কারা কারা এসেছে, কে প্রতিষেধক নিয়ে গিয়েছে তা কী করে জানব? শহরের লোককে কুপন দেওয়া হয়েছিল। তারপর কে কুপন নিয়ে ঢুকে গিয়েছে সেই দায়িত্ব কে নেবে। বাইরের লোক তো আসার কথা নয়।’’ তাহলে প্রায় ৪০ হাজার লোকজন কোথা থেকে এল?
কল্লোলের জবাব, ‘‘তাহলে গ্রামীণ এলাকার লোকজন ঢুকেছে। কেউ না কেউ তো নিয়েছে। প্রতিষেধক দেওয়া নিয়ে আগে তো কড়াকড়ি ছিল না।’’
চেয়ারপার্সন কবিতা বলেন, ‘‘কীভাবে কী হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এখনও ১১ হাজার ৩২৭ জন প্রতিষেধক নিতে বাকি রয়েছেন, তাঁদের জন্য আগামী ১৫ তারিখ ওয়ার্ড ভিত্তিক তিনটি করে শিবির করে দেওয়া হবে। পুজোর আগে শহরে সবাইকে প্রতিষেধক দিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy