Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Didir Suraksha Kavach

কবচের ‘কামালে’র আশায় তৃণমূল

কেন দুই জেলায় বিক্ষোভ কম? প্রথম এবং প্রধান কারণ, বিরোধী শক্তিশালী নয়। কিন্তু বহু জায়গায় তো শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও দিদির দূতদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৮
Share: Save:

ক্ষোভের বাষ্প বেরিয়ে গেলেই সমর্থন নিশ্চিত হয়!

‘দিদির দূত’ হয়ে‌ সেদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির গোদাপিয়াশালে এসেছিলেন বিধায়ক জুন মালিয়া। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে একগুচ্ছ নালিশ শুনেছিলেন বিধায়ক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন পরিস্থিতি দেখে বিধায়ক কথা বলেছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীর সঙ্গে। পরের‌ দিনই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। এই পরিকাঠামোর হাল‌ ফেরানোর আশ্বাস দেন তিনি। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা শোনাচ্ছেন, ‘‘এখানেই দলের এই কর্মসূচির সফলতা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভোল‌ বদলে যাবে। আমরাও মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবো!’’

জনসংযোগে এক সময়ে ‘দিদিকে বলো’ চালু করেছিল তৃণমূল। ফল‌ মিলেছে।‌ পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিবিড় জনসংযোগ‌ গড়ে তুলতে তৃণমূলের বাজি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। এই কর্মসূচিতে শামিল হয়ে ‘দিদির দূত’ হিসেবে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন‌ দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতারা। বিধায়ক, নেতাদের ঘিরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। কোথাও কোথাও দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসছে। ঘাটালে‌ যেমন দিলীপ মাজির সঙ্গে শঙ্কর দোলুইয়ের বিরোধ‌ প্রকাশ্যে এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোথাও এই কর্মসূচিতে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি তৃণমূলের বিধায়ক, নেতাদের।

কেন দুই জেলায় বিক্ষোভ কম? প্রথম এবং প্রধান কারণ, বিরোধী শক্তিশালী নয়। কিন্তু বহু জায়গায় তো শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও দিদির দূতদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে! এটা স্বীকার করে নিয়েও পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন শাসক দলের অনেকে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর অনেকেই টিকিট প্রত্যাশী। তাই সাংসদ, বিধায়কদের দলীয় কর্মসূচিতে বিক্ষোভ দেখানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন বিক্ষুব্ধরা। ‘দিদির দূত’ হয়ে‌ একাধিক এলাকায় গিয়েছেন‌ তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। সুজয় বলছেন, ‘‘মানুষ সমস্যা, অভিযোগের কথা শোনাচ্ছেন। এটা শোনার জন্যই তো এই কর্মসূচি।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতি মনে করাচ্ছেন, ‘‘এটা কিন্তু নিছক জনসংযোগ কর্মসূচি নয়। এই কর্মসূচির‌ লক্ষ্য মানুষের জীবনের সঙ্গী হওয়া।’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। কবচ-তাবিজ ছাড়া গতি নেই তৃণমূলের!’’

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে ‘দিদির দূতরা’ কর্মসূচি করে চলেছেন নির্বিবাদে। কোথাও সেভাবে তাঁদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি, হচ্ছেও না। শাসকদলের দাবি, জঙ্গলমহলে উন্নয়ন হয়েছে। তাই ক্ষোভ নেই। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর কথায়, ‘‘জেলায় যথেষ্ট উন্নয়ন-কাজ হয়েছে। মানুষজন তাই সন্তুষ্ট।’’ জেলা কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে বিরোধীরা উপযুক্ত রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে তুলতে পারছেন না বলেই তৃণমূল ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে।’’ কেন ব্যর্থ হচ্ছে বিরোধীরা? সুব্রতের ব্যাখ্যা, ‘‘এক সময় সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক সচেতন করে অনেক গণ আন্দোলন হয়েছে। যা গোটা দেশকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে পরীক্ষিত ও পরিত্যক্ত নেতাদের নিয়ে যে বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর গড়ে উঠেছে তাঁদের ডাকে সাধারণ মানুষ সাড়া দিচ্ছেন না।’’ বিজেপির অবশ্য দাবি, বিক্ষোভ হচ্ছে। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, ‘‘এই তো কয়েকদিন আগে প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা এক গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তার পর থেকে শাসকদলের বিধায়করা সেভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় যাচ্ছেন না। দু’এক জন নেতা-নেত্রী নিজেদের চেনাজানা গন্ডিতে গিয়ে ঘুরে আসছেন। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সফল কর্মসূচির দাবি করছেন।’’ তবে বিরবাহার দাবি, ‘‘আদৌ আমাকে কেউ বিক্ষোভ দেখাননি। পুরোটাই মিথ্যা প্রচার।’’ সূত্রের খবর, তৃণমূলেরই এক গোষ্ঠী বিরবাহার কর্মসূচি চলাকালীন বিক্ষোভের তত্ত্ব সামনে এনেছিল।

মহাভারতে কর্ণের ছিল কবচ ও কুণ্ডল। যুদ্ধের আগে দেবরাজ ইন্দ্র কৌশলে নিয়ে এসেছিলেন সে দু’টি।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে কবচ হাতে মেঠো পথ ধরে হাঁটছেন দিদির দূতেরা। ইন্দ্রের অভাব টের পাচ্ছে বিরোধী শিবির।

অন্য বিষয়গুলি:

Didir Suraksha Kavach Didir Doot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy