জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে যেখানে একমাত্র ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, সেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই কিটের অভাবে থমকাচ্ছে পরীক্ষা। কিট শেষ হলে তা কেনার রিক্যুইজিশন পাঠাতে হচ্ছে। আর তা আসতে আসতে পেরিয়ে যাচ্ছে তিন-চারদিন। ফলে, সমস্যায় পড়ছেন জ্বর আক্রান্ত রোগী এবং তাঁদেরর পরিজনেরা। মেডিক্যালের এক সূত্রে খবর, গত চারদিন এখানে ডেঙ্গি পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য যে তিনটি অ্যালাইজা যন্ত্র রয়েছে, তার একটি আবার খারাপ। ইঁদুরে কেটে দিয়েছে ওই যন্ত্রের পাইপ। অগত্যা দু’টি যন্ত্র দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে। কিটের অভাবে ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা থমকানোর কথা অবশ্য মানতে নারাজ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, “কিটের তেমন সমস্যা নেই! পরীক্ষা তো হচ্ছে!” তবে একটি অ্যালাইজা যন্ত্র বিকল হওয়ার কথা মানছেন তিনি। ইন্দ্রজিৎবাবুর আশ্বাস, ‘‘যন্ত্রটি মেরামতের চেষ্টা চলছে। আশা করি, দ্রুত সারানো যাবে।”
অধ্যক্ষ যাই বলুন না কেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালের অন্য এক কর্তা মানছেন, গত সপ্তাহে ডেঙ্গি পরীক্ষার কিট শেষ হয়ে গিয়েছিল। চারটি কিট কেনার ‘রিক্যুইজিশন’ পাঠানো হয়েছে। মেডিক্যালের এক সূত্রে খবর, এ রমধ্যে দু’টি এনএস- ১ এবং দু’টি আইজেএম-এ। ওই কর্তার কথায়, “এক-একটি কিটের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এই কিট পুণে থেকে আসে। তাই একটু সময় লাগে।’’
কিটের অভাবে ডেঙ্গি পরীক্ষা থমকানোর খবর পৌঁছেছিল জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে আসেন জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। দেখা করেন মাইক্রো বায়োলজির বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথি শতপথীর সঙ্গে। পার্থসারথিবাবু জানান, আগেই কিটের রিক্যুইজিশন পাঠানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “মেডিক্যালে গিয়েছিলাম। কিটের একটা সমস্যা ছিল। মিটে গিয়েছে!” মেডিক্যালের এক কর্তার আশ্বাস, “ডেঙ্গি পরীক্ষার সব কিট বুধবারের মধ্যে এসে যাবে।”
ডেঙ্গির নির্ণায়ক পরীক্ষা হয় মেডিক্যালের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগে। ওই বিভাগে এখন রীতিমতো ‘চাপ’। মেডিক্যালের এক সূত্রে খবর, গত দু’সপ্তাহে প্রায় চারশো জনের রক্তের নমুনা এসেছে এখানে। এক সময় র্যাপিড কিটের মাধ্যমে ডেঙ্গির পরীক্ষা হত। পরে তা নিষিদ্ধ করে স্বাস্থ্য দফতর। এখন অ্যালাইজা বা আইজেএম পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষাই স্বীকৃত। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক চিকিৎসক জানালেন, র্যাপিড কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করালে ৭০-৮০ শতাংশ রিপোর্ট ভুল আসে। কিন্তু অ্যালাইজা বা আইজেএম পদ্ধতিতে ভুল রিপোর্ট আসার প্রশ্ন নেই।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা জানান, ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা শুধুমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যালেই হয়। ম্যাক অ্যালাইজা কিংবা এনএস-১ অ্যালাইজা নিশ্চিত ভাবে ডেঙ্গি নির্ধারণ করতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় বাজার চলতি এনএস-১ র্যাপিড টেস্ট করা হচ্ছে। এটা ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা নয়। র্যাপিড টেস্ট করেই ডেঙ্গি বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে জ্বর নিয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গির মতো উপসর্গ থাকলে রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্ট পেতে তিন-চার দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। মেডিক্যালের এক চিকিৎসকের কথায়, “অ্যালাইজা কিটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক রক্তের নমুনা না পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা শুরু করা যায় না। যথেষ্ট সংখ্যক নমুনা পেতে ৫-৬ দিন লেগে যায়। তারপর পরীক্ষা শুরু হয়।’’
প্রতিটি কিটে কতজনের রক্ত পরীক্ষা হয়? মেডিক্যালের এক সূত্রে খবর, কিট-পিছু ৯৬ জনের রক্তের পরীক্ষা হওয়ার কথা। তবে তা হয় না। গড়ে ৮৮-৯০ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়। ফলে, কিটের অভাবে সমস্যা হচ্ছেই।
তার উপর অ্যালাইজা পরীক্ষার একটি যন্ত্র বিকল হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। মেডিক্যালে সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে রক্তের সিরাম পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি যন্ত্রের একটি কাজ করছে না। তার পাইপ ইঁদুর কেটে দেওয়াতেই বিপত্তি। এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তি বাড়ছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। এক রোগীর আত্মীয়ের কথায়, ‘‘রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পেলে সুবিধা হয়। এতে তো রোগ বুঝতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy