Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Adoption

বাড়ছে শিশুকন্যা দত্তক নেওয়ার ঝোঁক

মেদিনীপুরে সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্র রয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চে এটি চালু হয়েছে। রাজ্যের প্রথম সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্র এটিই।

কন্যা দত্তক নেওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী মা-বাবা।

কন্যা দত্তক নেওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী মা-বাবা।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৪
Share: Save:

দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের চাহিদা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন মহলের মতে, এই পরিস্থিতি বেশ আশা জাগানোর মতোই। তাদের মতে, বাবা- মায়ের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই তাঁদের পুত্রের তুলনায় কন্যার প্রতি বেশি আগ্রহী করে তুলছে।

মেদিনীপুরে সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্র রয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চে এটি চালু হয়েছে। রাজ্যের প্রথম সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্র এটিই। জানা যাচ্ছে, এই কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত ২১টি শিশু দত্তকে গিয়েছে। এরমধ্যে ১১টি পুত্র সন্তান, ১০টি কন্যা সন্তান। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার চাহিদা বাড়ছে। এটা তো ভাল দিক।’’ সম্প্রতি এখান থেকে দত্তকে গিয়েছে একটি শিশু। সেটিও ছিল কন্যা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, ‘‘সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে দত্তক নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিবাহিত দম্পতি ছাড়া অবিবাহিত পুরুষ বা নারীও দত্তক নিতে পারেন। যথাযথ নিয়ম মেনে।’’

আগে আদালতের নির্দেশে শিশু দত্তক নেওয়ার নিয়ম চালু ছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, এখন নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। নতুন নিয়মে এখন জেলাশাসকের নির্দেশেই শিশু দত্তক নেওয়া যায়। আগে দত্তক দেওয়ার নির্দেশনামায় সই থাকত জেলা বিচারকের। এখন সই থাকছে জেলাশাসকের। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ সংশোধনের জেরে আরও সরলীকরণ হয়েছে দত্তক দেওয়ার প্রক্রিয়া। গত সেপ্টেম্বর থেকে ওই নয়া নিয়ম কার্যকর হয়েছে।

৬ বছর বয়স পর্যন্ত অনাথ শিশু থাকতে পারে শিশু দত্তক কেন্দ্রে। এর বেশি বয়সি অনাথ বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী থাকে হোমে। দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া এখন অনলাইনেই নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রশাসনিক সূত্র মনে করাচ্ছে, সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রকের অন্তর্গত ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’র (কারা) পোর্টালে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। পোর্টালে নাম নথিভুক্ত হওয়ার পরে যাচাইপর্ব শুরু হয়। কে এবং কেন আবেদন করেছেন, সেই সব দেখা হয়। আবেদনকারীর বাড়ি পরিদর্শন হয়। পরবর্তী সময়ে আবেদন মঞ্জুর হলে শিশু দত্তকে যায়। দত্তক নেওয়ার সময় একটি ফর্মপূরণ করে পুত্র নিতে চাইছেন না কন্যা, সেটা জানাতে হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভারতীয় নাগরিক, প্রবাসী ভারতীয়, বিদেশিরাও এ দেশ থেকে শিশু দত্তক নিতে পারেন। তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে পৃথক নিয়ম রয়েছে।’’

কন্যাভ্রুণ বা কন্যা সন্তান হত্যার মতো সমস্যা এখনও চিন্তার কারণ। তার মাঝেও দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের চাহিদা বাড়তে থাকার ছবিটা বেশ আশাপ্রদ বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। ডেবরা কলেজের অধ্যক্ষা রূপা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কন্যা সন্তানের প্রতি সমাজের বিরূপ মনোভাব যে বদলাচ্ছে, এটা তারই প্রতিফলন।’’ মেদিনীপুরের বাসিন্দা, সমাজকর্মী রোশেনারা খানেক কথায় ‘‘দত্তকের ক্ষেত্রে কন্যার কদরের পিছনে সামাজিক বদল ও বাবা- মায়ের আধুনিক চিন্তার একটা ছাপ স্পষ্ট। এটা অবশ্যই সামাজিক দিক থেকে ইতিবাচক।’’ কন্যা সন্তান দত্তক নিয়েছেন, এমন এক দম্পতি শোনাচ্ছেন, ‘‘আমাদের সমাজে মেয়েরা আজও অবহেলিত। তাই আমরা দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যাই নিতে চেয়েছিলাম।’’

মেদিনীপুরের এক সমাজকর্মীর মতে, কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার হার বাড়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এক, অবশ্যই সমাজ সচেতনতা। দুই, যে শূন্যতা বোধ থেকে দত্তক নেওয়া তা মেয়েই বেশি পূরণ করতে পারবে এই ভাবনা। তিন, পুত্র সন্তান দত্তক পেতে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করতে না চাওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, কন্যা সন্তান মানুষ করার মধ্যে চ্যালেঞ্জও বেশি। অনেক নিঃসন্তান দম্পতি সেটাও নিতে চান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Child Adoption midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy