নিথর: ঘাটালে পৌঁছে বাস থেকে নামানো হল দেহ। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি ফেরার পথে ফের বাসেই মৃত্যু হল এক পরিযায়ী শ্রমিকের। দেহ নিয়েই ফের ছুটল বাস।
মহারাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে বাসেই মারা গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কমল সেনাপতি (৪৩)। তিনি পেশায় সোনার কারিগর ছিলেন। তাঁর বাড়ি দাসপুর থানার রাজনগর লাগোয়া গোকুলনগরে। বুধবার সন্ধ্যায় ওড়িশার সম্বলপুর সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত বাসে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে দেহ নিয়েই বাস ঘাটালে পৌঁছয়। বাকি ৩০ জন যাত্রীকে ঘাটাল শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে সরকারি কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে।
এক দিন আগেই মুম্বই থেকে ফেরার পথে বাসে মারা যান পিংলার এক যুবক। তাঁর দেহ নিয়ে একই ভাবে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ছুটেছিল বাস। তারও কিছু দিন আগে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন থেকে পড়ে দাসপুরের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ফের বাড়ি ফেরার আগেই জেলার বাসিন্দা এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুতে শোরগোল পড়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বাসে আসার পথে রাস্তায় ঘাটালের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর দেহটি ঘাটাল হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য ওই বাসের সব যাত্রীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।”
বুধবার রাতে এক বন্ধু মারফত দাসপুরের বাড়িতে কমলের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয়। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন কমল। স্ত্রী, চার মেয়ে, বাবা-মা নিয়ে মোট সাত জনের সংসার। বড় মেয়ে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জমিজমা রয়েছে সামান্যই। বছর কুড়ি ধরে মহারাষ্ট্রের কুরলায় সোনার কারিগর হিসাবে কাজ করতেন কমল। সম্প্রতি সেখানে একটি ছোট সোনার দোকানও খুলেছিলেন। কমলের স্ত্রী তাপসী সেনাপতি বলেন, “আমরা আস্তে সুখের মুখ দেখছিলাম। ও চলে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল।” ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন কমলের বাবা দুলাল সেনাপতি। বলছিলেন, “ছেলে বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছিল। তবে এ ভাবে ফিরবে ভাবিনি।”
কমলের সঙ্গীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে ওই যুবক বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উপায় হচ্ছিল না। শেষে গত ২৬ মে মহারাষ্ট্র থেকে বাসে বাড়ির পথে রওনা দেন। বাসে কমলের এক সহযাত্রীর জানালেন, বুধবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার সীমানা লাগোয়া এলাকায় এক ধাবায় খেতে নেমেছিলেন সকলে। খাওয়া শেষে অন্যরা বাসে উঠে পড়লেও কমল ওঠেননি। কমল ধাবার পাশে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন। তাঁকে তুলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য রাজ্যের লোক শুনে ভর্তি নেয়নি। ওই যাত্রীর কথায়, ‘‘তখন ওর প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তার কয়েক ঘন্টা পরই কমল মারা যায়।” কমলের এক বন্ধুর আক্ষেপ, “বাসে গল্পগুজব করছিল। আবার কবে মুম্বই ফিরব, সে কথাও হয়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মরেই গেল ছেলেটা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy