প্রতীকী ছবি।
চেম্বারে বসেছিলেন এক চিকিৎসক। আচমকা মেসেঞ্জারে ভিডিয়ো কল। সেই কল রিসিভ করতেই অপরপ্রান্তে এক নগ্ন মহিলা আকারে ইঙ্গিতে অশালীন ইঙ্গিত করছেন। তড়িঘড়ি কল কেটে দেন ওই চিকিৎসক। মিনিট দশেক পরে তাঁর কাছে মেসেঞ্জারে ওই ভিডিয়ো কলের রেকডিং পাঠানো হয়। যা দেখে ঘাবড়ে যান তিনি। কল রেকর্ডিংয়ে দেখা যায়, ওই চিকিৎসকও নগ্নদেহে ভিডিয়ো চ্যাটিং করছেন! এরপরই চিকিৎসকের কাছে চাওয়া হয় মোটা টাকার অঙ্ক। টাকা না দিলে ওই নগ্ন ডিভিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
শুধু ওই চিকিৎসকই নন। গত কয়েক মাসে ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষক, সরকারি কর্মী, ব্যবসায়ী, কলেজ পড়ুয়ার মত অনেকেই যৌন সাইবার চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খোয়াতে বাধ্য হয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজন সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকিরা সামাজিক সম্মানহানির আশঙ্কায় পুলিশে অভিযোগ করতে রাজি হননি। সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশের দাবি, মূলত, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, গুরুগ্রাম, অসম, ত্রিপুরা থেকেই এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত করা হচ্ছে। ফেসবুক প্রোফাইল থেকেই 'শিকার' খুঁজছে অপরাধীরা। তাই সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা সতর্ক ও সংযত না হলে বিপদ কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে অন্তর্জালেই। অনেকে তথ্যও দিতে না চাওয়ায় ফলে তদন্তের কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকেও। এই পরিস্থিতিতে অপরিচিত ভিডিয়ো কলের প্রলোভনে সাড়া না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। অপরিচিত কাউকে সমাজমাধ্যমের বন্ধু তালিকায় রাখলেও বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে সুন্দরী তরুণীদের ফেসবুক প্রোফাইল ‘ক্লোন’ করে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন জনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে সাইবার চক্রীরা। মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ডদের সঙ্গে বন্ধুত্বও করা হচ্ছে। তারপরে ভিডিয়ো কল করে নগ্ন এক মহিলা যৌন উত্তেজনাপূর্ণ কথপোকথন করতে চাইছেন। পর পর কয়েকটি এ ধরনের চ্যাটের রেকর্ডিং দেখে পুলিশের অনুমান, সামাজিক সম্মানহানির ভয় দেখানো যাবে, এমন ব্যক্তিদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে এক শিক্ষক এমন ডিডিয়ো চ্যাটে সাড়া দিয়ে ফেলায় তাঁর নগ্ন ভিডিয়ো মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ডদের কাছে পাঠানোর ভয় দেখানো হয়। ওই শিক্ষকের কাছে গুগল পে-র মাধ্যমে মোটা টাকা দাবি করা হয়। ওই শিক্ষক টাকা দিয়ে দেন। আবার জেলার এক সরকারি দফতরের কর্মীও বাড়িতে একা থাকার সময়ে চ্যাটে সাড়া দেন। তিনি অবশ্য টাকা দেওয়ার আগেই সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সময়মতো পুলিশ পদক্ষেপ করায় সাইবার চক্রীরা তাঁর ভিডিয়ো আর ভাইরাল করতে পারেনি।
ঝাড়গ্রামের এক ব্যবসায়ী জানালেন, তাঁর আতঙ্কের অভিজ্ঞতা। রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল আসে। সেই কল ধরার পরেই অপর প্রান্তে নগ্ন মহিলাকে দেখে তিনি কল কেটে দেন। কিন্তু মিনিট দশেক পরে ওই ব্যবসায়ীর কাছে যে ভিডিয়ো কল রেকর্ডিং পাঠানো হয়, তাতে দেখা যায়, তিনিও নগ্ন দেহে চ্যাট করছেন। পুলিশের দাবি, এ ক্ষেত্রে যৌন উত্তেজনাপূর্ণ কথপোকথনে সাড়া না দিলেও, স্বল্প সময়ের জন্য ভিডিয়ো কল রিসিভ করা ওই ব্যবসায়ীর মুখের সঙ্গে অন্য পুরুষের নগ্ন দেহের ভিডিয়ো জুড়ে দিয়ে পাঠানো হয়। যা সাধারণ চোখে ধরা সম্ভব নয়। ওই ব্যবসায়ী তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের মোবাইল নম্বর ও হোয়াটঅ্যাপ নম্বর পাবলিক করে রেখেছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহে গড়ে এ ধরনের দু’ থেকে তিনটি অভিযোগ সাইবার ক্রাইম থানায় আসছে। এ ধরনের হয়রানি এড়াতে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো সমাজ মাধ্যমে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন কোড চালু রাখার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। অপরিচিত ভিডিয়ো কল রিসিভ করে এ ধরনের অভিজ্ঞতা হলে নিজে সংযত থেকে সঙ্গে সঙ্গে অচেনা হোয়াটস অ্যাপ নম্বর অথবা অপরিচিত মেসেঞ্জার বা সংশ্লিষ্ট ফেসবুক প্রোফাইলটি ব্লক করে সাইবার ক্রাইম থানায় যোগাযোগ করা জরুরি।
পুলিশের বক্তব্য, শুধু ফেসবুকই নয়, যাঁরা পর্ন সাইট সার্চ করেন অথবা পর্ন সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, কিংবা পর্ণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যাঁরা যুক্ত থাকেন তাঁরাও এ ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। ভিন রাজ্যের চক্রীরা নানা ধরনের ভুয়ো নম্বর ও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করায় তাদের নাগালও পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে অচেনা বন্ধুত্ব থেকে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সতর্ক ও সংযত থাকতে হবে। সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অভিযোগগুলি তদন্ত করে চক্রীদের হদিসের চেষ্টা হচ্ছে।’’\
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy