গ্রামবাসীরা তখন গভীর ঘুমে। হঠাৎ হাতির আর্তনাদ কানে যেতেই বিছানা থেকে উঠে বসেন সকলে। শব্দের উৎস খুঁজে খুঁজে আলুর ক্ষেতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছে তাঁদের। দেখেন, ক্ষেতের পাশে পাতকুয়োর ভিতরে পড়ে হাঁসফাঁস করছে একটি হস্তীশাবক। আর তাকে তুলতে না-পেরে আর্তচিৎকার করছে মা-হাতি এবং তার দলবল। দৃশ্য দেখে চিন্তায় পড়ে যান পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়রাকুলি গ্রামের বাসিন্দারা। খবর দেওয়া হয় বন দফতরে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে শেষ পর্যন্ত মাটি খোঁড়ার যন্ত্র দিয়ে হস্তীশাবককে উদ্ধার করেছেন লালগড় রেঞ্জের ভাউদি বিটের বনকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাতে একটি আলুর ক্ষেতে ঢুকে পড়ে একদল হাতি। তার মধ্যে ছিল একটি মা-হাতি এবং তার সন্তান। ক্ষেতের পাশেই পাতকুয়ো। কোনও ভাবে তার মধ্যে পড়ে যায় হস্তীশাবকটি। মা-হাতি অনেক চেষ্টা করেও সন্তানকে উদ্ধার করতে না-পেরে চিৎকার শুরু করে। স্থানীয়দের মাধ্যমে সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বন দফতরের কর্মীরা। মাটির পাতকুয়ো কেটে রাস্তা তৈরি করে হস্তীশাবকটিকে তোলা হয়। তাকে সুস্থ অবস্থাতেই মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্তানকে নিয়ে জঙ্গলে ফিরে যায় মা।
লালগড়ের রেঞ্জ অফিসার লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘হস্তীশাবকের পাতকুয়োয় পড়ে যাওয়ার খবর শুনে জেসিপি (মাটি খোঁড়ার যন্ত্র) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দমকল, পুলিশ এবং হুলাপার্টির সদস্যদের সহযোগিতায় বনকর্মীরা হাতিটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাতটি হাতি দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। তাদের মধ্যে মা-হাতিটি খুবই উত্তেজিত ছিল। আমরা হুলাপার্টির সাহায্যে সব হাতিকে সরিয়ে দিই। তার পর শাবককে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি।’’
আরও পড়ুন:
স্থানীয় সূত্রের খবর, চার-পাঁচ দিন ধরে ৭০-৭৫টি হাতি পিড়রাকুলি গ্রাম সংলগ্ন আজনাশুলি, চালপুড়ার জঙ্গলে রয়েছে। রাত হলেই তারা খাবারের সন্ধানে জয়পুর, মালধা, পিড়াকাটা, মাহাতোপুর, পাথরনালা, অভয়া, বালিবাঁধ-সহ বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বিস্তীর্ণ অংশে আলুর চাষ হয়েছে। সেই ফসল তছনছ করে দিচ্ছে তারা। এ নিয়ে বনকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেছেন চাষিরা।