Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
বেলপাহাড়ির ঢাঙিকুসুমের হাল ফেরাবে সিআরপি

মাওবাদী মোকাবিলায় গ্রাম দত্তক

ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা ঘেঁষা বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত পাহাড়ি ঢাঙিকুসুম গ্রামটি এক সময় ছিল মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে পাহাড় কেটে গ্রামে যাওয়ার রাস্তা হয়েছে।

কমিউনিটি হল তৈরির কাজ চলছে ঢাঙিকুসুম গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

কমিউনিটি হল তৈরির কাজ চলছে ঢাঙিকুসুম গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঢাঙিকুসুম শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

কখনও খেলাধুলো, কখনও বা দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিলি করে জনসংযোগ করতে দেখা যায় সিআরপি জওয়ানদের। মাওবাদীদের মোকাবিলায় এ বার ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির আস্ত একটা গ্রাম ‘দত্তক’ নিল সিআরপি। লক্ষ্য উন্নয়নের মন্ত্রে গ্রামের ভোল বদল।

ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা ঘেঁষা বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত পাহাড়ি ঢাঙিকুসুম গ্রামটি এক সময় ছিল মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে পাহাড় কেটে গ্রামে যাওয়ার রাস্তা হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। নিয়মিত সিআরপি-র তল্লাশি অভিযানের ফলে মাওবাদীরা এখন যথেষ্টই কোণঠাসা বলে দাবি। তবে গ্রাম থেকে মাত্র আটশো মিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের ঢাকপাথর এলাকা। ঝাড়খণ্ডের দিকে মাওবাদীদের সক্রিয়তা বেড়েছে। তাই ঝুঁকি নিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় বাহিনীও।

গ্রামের যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে সোমবার সিআরপি-র ১৬৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষিণ কর্মসূচি শুরু হল।

আগামী দু’মাস ধরে গ্রামের ৮ জন যুবককে কম্পিউটর প্রশিক্ষণ, ১০ জন মহিলাকে টেলারিং, ১১ জন যুবককে রাজমিস্ত্রি ও ১৬ জন যুবককে পাথরের থালা বাটি ও শিল্পকর্মের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ দিন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন সিআরপি-র ১৬৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের দ্বিতীয় কমান্ডান্ট রাহুলকুমার। তিনি জানান, সিআরপি-র নিরন্তর তল্লাশি অভিযানের ফলে এলাকায় শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে বেকার যুবক-যুবতীদের ভুল বুঝিয়ে মাওবাদীরা নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করে থাকে।

তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার বাসিন্দারা স্বনির্ভর হলে মাওবাদীরা আর তাঁদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। ইতিমধ্যেই গত অক্টোবরের গোড়ায় গ্রামটি দত্তক নেওয়ার পরে সিআরপি-এর উদ্যোগে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের বাড়ি ও শৌচাগার গুলি সংস্কার করে ঝাঁ-চকচকে করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীর দেওয়া জমিতে একটি কমিউনিটি হল তৈরির কাজ চলেছে।’’

ঢাঙিকুসুম গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো। বেশিরভাগই আদিবাসীভূমিজ। তবে পাহাড়ি গ্রামে সেচের ব্যবস্থা নেই। এই গ্রামে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ করেন।

আর বাকি সময়ে জঙ্গলের শালপাতা সংগ্রহ করে, বাবুই ঘাসের দড়ি বানিয়ে প্রতি শনিবার পাঁচ কিলোমিটার দূরের চিড়াকুটি হাটে বেচতে যান। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বহুদিন এলাকায় একশো দিনের কাজ হয়নি।

কম্পিউাটর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণা লীনা সিংহ, একাদশ শ্রেণির ছাত্র সমীর সিংহ। তাঁদের বক্তব্য, একসময় আমরা দুর্গম এলাকায় পড়ে থাকতাম। রাস্তা হওয়ার পরে এখন বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটছে। গ্রামবাসী দিলীপ সিংহ, প্রদীপ সিংহ, তরুণ সিংহরা বলেন, ‘‘বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ করে সংসার চলে না। তাই সিআরপি-র কাছে রাজমিস্ত্রির প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। প্রশিক্ষণ শেষে বাইরে কাজের বন্দোবস্তের আশ্বাস দিয়েছেন ওঁরা।’’

সিআরপি-র ১৬৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের দ্বিতীয় কম্যান্ডান্ট রাহুল কুমার ছাড়াও এ দিন ছিলেন ডেপুটি কমান্ডান্ট বিজয়কুমার মল্লিক, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট পরিমল ভদ্র প্রমুখ। সব সিআরপি কর্তা গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেরা স্বনির্ভর হোন, ভালমন্দ বুঝতে শিখুন। গ্রামবাসীরাও জবাবে বলেন, ভালর আশাতেই তো প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।

অন্য বিষয়গুলি:

Belpahari CRPF Village Adoption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE