দিঘার সমুদ্রে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র
২০১০ সালে কোলাঘাটের কাছে নাউপালায় বনভোজনে এসে নৌকাভ্রমণে বেরিয়ে রূপনারায়ণে ডুবে মারা গিয়েছিলেন ১৯ জন। নৌকার মাঝিরাই তখন উদ্ধারের কাজ করেছিলেন। কারণ পূর্ব মেদিনীপুরে ডুবুরি বাহিনী না থাকায় কলকাতা থেকে ডুবুরি আনতে কেটে গিয়েছিল একটা দিন। সেই ঘটনায় বেরিয়ে এসেছিল বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসনের দুর্বলতা।
২০১৩ সালে পাঁশকুড়ার রানিহাটির কাছে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। উদ্ধার কাজে জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে নামানো হয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী কাঁথি মহকুমা ছাড়াও রূপনারায়ণ, হলদি, কাঁসাই সহ বিভিন্ন নদীবেষ্টিত একাধিক এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও বিপর্যয় মোকাবিলায় জেলার পরিকাঠামো যে এখনও দুর্বল, এই সব ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে। বিপর্যয়ের সময় উদ্ধার কাজে জেলায় অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের দু’টি উদ্ধারকারী গাড়ি, ক্রেন, ল্যাডার-সহ নানা সরঞ্জাম থাকলেও এখনও স্পিড বোট, ডুবুরি বাহিনী নেই। ফলে জেলায় কোনও নৌকাডুবি হলে উদ্ধার কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় হলদিয়ার কোস্টগার্ডের ডুবুরি বা কলকাতা থেকে আসা ডুবুরি বাহিনী জন্য।
পরিকাঠামোর যে অভাব রয়েছে তা স্বীকার করেছে জেলা প্রশাসনও। তাই বন্যা, ঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তুলতে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। জেলায় প্রশিক্ষিত ডুবুরির অভাবের কথা মেনে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘জেলায় ডুবুরি বাহিনী গড়ে তুলতে উপকূলবর্তী এলাকার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে কাজে অনেকটা সুবিধা হবে।’’
মুর্শিদাবাদের দৌলতপুরে বাস দুর্ঘটনায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে উদ্ধার কাজে নেমে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। সময়মতো ডুবুরি না পাওয়া নিয়ে অভিযোগও উঠেছে। এই অবস্থায় দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুরের মতো সৈকতগুলিতে কোনও বিপর্যয় ঘটলে বা পর্যটকেরা বিপদে পড়লে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কতটা তৈরি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই।
দিঘায় সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। দুগার্পুজো বা অন্য উৎসবের সময় তা আরও বাড়ে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রচুর হোটেলও রয়েছে দিঘা, মন্দারমনিতে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। যেমন, ২০০৪ সালে রাজ্যে সুনামিতে সতর্কতা জারি হয়েছিল দিঘায়। ফের তেমন হলে কী করা উচিত, ভূমিকম্প হলে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে, পযর্টকেরা সমুদ্রে বিপদে পড়লে কী ভাবে উদ্ধার করা হবে প্রভৃতি বিষয়ের জন্য ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দিঘায় পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সাত জনের ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ’ রয়েছে। একজন অফিসারের অধীনে ৬জন কর্মী কাজ করেন। তাঁরা লাইফ জ্যাকেট পরে নুলিয়াদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন সৈকতে। এ ছাড়া হোটেলে আগুন লাগা থেকে অমরাবতী পার্কের রোপওয়ে বিপর্যয় বা ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে সে বিষয়ে পর্যটকদের সচেতন করার পাশাপাশি ছোটখাটো দুর্ঘটনাও তাঁরাই সামাল দেন পুলিশের সঙ্গে। কিন্তু বড় দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় ডাক পড়ে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের।
তবে দিঘায় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ থাকলেও মন্দারমনি, তাজপুর বা শঙ্করপুরে তা নেই বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর। এই সব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটলে দিঘা থেকে বাহিনী যায়। তবে ওই সব এলাকায় নুলিয়া রয়েছে পুলিশের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা, বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা সব সময়েই সতর্ক রয়েছি। নিরাপত্তায় এখন আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ও পুলিশ দিঘায় যৌথভাবে কাজ করছে।’’ তাঁর দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম যে পরিকাঠামো দরকার তা তাঁদের রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy