সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলতে গেলেও টেবিল ফাঁকা ছিল সকালের দিকে। দাসপুর ২ ব্লক অফিসে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
দাবি: বৃহস্পতিবার বিকেল। পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করেছিল, তারা প্রস্তুত।
বাস্তব: শুক্রবার বেলা ১১টা। সিপিএম প্রার্থীরা প্রস্তাবকদের নিয়ে হাজির দাসপুর ২ ব্লকে। সেখানে তখন চলছিল ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ। মনোনয়ন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। বিকেলে জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল সিপিএম।
প্রশাসন বলল: প্রথম দিন প্রথমদিকে একটু সমস্যা ছিল। দ্রুত তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তাঁর নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। শুক্রবার সকালে অফিস খুলতেই দাসপুরে মনোনয়ন দিতে হাজির হল সিপিএম। তাদের অভিযোগ,নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তখনও ডিসিআর কাটা শুরু হয়নি। ব্লক অফিসের ভিতরে তখনও প্রশিক্ষণ চলছিল বলে খবর। ফলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সাড়ে বারোটার পর শুরু হয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া। সিপিএমের স্থানীয় গোপীগঞ্জ এরিয়া কমিটির সম্পাদক রণজিৎ পাল বলেন, “দাসপুর-২ ব্লকে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত ছিল। শুক্রবার থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিন নির্দিষ্ট সময়ের পরেও প্রশাসন প্রস্তুত ছিল না। টেবিলও ছিল ফাঁকা।”
বামেদের মতো বিজেপিও প্রশাসনিক অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, ‘‘প্রথম দিনেই তো প্রশাসনের হিমশিম অবস্থা। পরে কী হবে জানি না।’’ আর এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা আশিস হুতাইতের বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন তো অনেক আগে প্রস্তুত। প্রস্তুত নয় এমন কথা আমার জানা নেই। যারা অভিযোগ করছে তারাই বলতে পারবে।’’
প্রথম দিনেই মনোনয়ন! সিপিএমকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না শাসক দল। তৃণমূলের নেতা আশিস বলেন , ‘‘মানুষের রায় শেষ কথা বলে। ফলাফল ঘোষণা পর সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ সিপিএমের দাবি, ওই ব্লকের চাঁইপাট, দুধকোমরা এবং জোতঘনশ্যাম পঞ্চায়েত গুলিতে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ বার বাকি পঞ্চায়েত গুলিতে শুরু হয়ে যাবে। যদিও দাসপুর-২ বাদে ঘাটালের আর কোনও ব্লকে সিপিএম মনোনয়ন পত্র জমা দেয়নি। তবে এ দিন জেলা পরিষদ আসনের তালিকা প্রকাশ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। সুশান্ত শুনিয়েছেন, "ভোট ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আমরা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলাম।" তাঁদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি যে সারা, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সুশান্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের আসন রয়েছে ৬০টি। এরমধ্যে সিপিএমের প্রার্থী থাকছে ৫৫টি আসনে। সিপিআইয়ের প্রার্থী থাকছে ৫টি আসনে। এ দিন মেদিনীপুরে বামেদের এক বৈঠক হয়েছে। ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। তারপর ওই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী ঘোষণা কjরেছে বামেরা। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপকুমার সরকার। ছিলেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি ঘোষ। তবে এ দিন জেলা পরিষদের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনের বাম প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার মধ্যে ১৬ জন সিপিএমের, একজন সিপিআইয়ের। সিপিএমের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মধুশ্রী মজুমদার, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদক ভগবতী মাহাতো, নিখিলবঙ্গ পার্শ্বশিক্ষক সমিতির জেলা সহ সভাপতি সুদর্শন বাগ, সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সহ সম্পাদক অর্জুন মাহাতো, আইসিডিএস কর্মচারী ইউনিয়নের নেত্রী সম্মতি সরেন, সিপিআইএমের সাঁকরাইল এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিবেক মণ্ডল প্রমুখ।
এ দিন অবশ্য দাসপুর-২ ব্লকে বিজেপিও বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে।বিজেপির পক্ষ থেকে নারায়ণগড়ে নয়টি, দাঁতন ১ ব্লকে দুটি মনোনয়ন তোলা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে সোমবার থেকে পুরো দমে বিজেপি প্রার্থীরা ঘাটাল মহকুমা জুড়ে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শুরু করবেন। আর তৃণমূল? কাল, রবিবার ঘাটালের পাঁচ ব্লকের তালিকা চূড়ান্ত করতে দাসপুরের গৌরায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে শাসক দল তৃণমূল।
দিনের শেষে এ দিন বামেরা এবং হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে বিজেপি ছাড়া আর অন্য কোনও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পত্র জমা পড়েনি। কবে থেকে মনোনয়ন জমা শুরু করবেন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর নেতা অজিত মাইতি বলেন বলেন, ‘‘ঠিক সময়ই মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
আর বিজেপি নেতা শীতল কপাটের দাবি, ‘‘শুক্রবার থেকেই তো বিজেপি মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে।’’
দাঁতন ২, মোহনপুর ও কেশিয়াড়ি ব্লকে শুক্রবার কোনও মনোনয়ন তোলা ও জমা হয়নি। কেশিয়াড়িতে কোনও পক্ষই মনোনয়ন তোলেনি
এ দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy