তৎপর: জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বৃদ্ধের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। মাস তিনেক আগেই ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়েছিল। করোনা আবহে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃদ্ধকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন পরিবারের। দিন দু’য়েক আগে ওড়িশায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ওই বৃদ্ধ। তাঁর পরিজন ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। খড়্গপুর মহকুমার দাঁতন-২ ব্লকের সাউরি পঞ্চায়েতের যে গ্রামে ওই বৃদ্ধের বাড়ি তা-ও সিল করা হয়েছে।
এই ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে ওই বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন বলেও লোকমুখে ছড়িয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে আতঙ্কে ছিলেন কোয়রান্টিনে থাকা বৃদ্ধের পরিজনেরা। শুক্রবার অবশ্য জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের অবস্থা স্থিতিশীল। ওড়িশার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “ওই বৃদ্ধের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। ওঁর সঙ্গে আসা স্ত্রী ও নাতির লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।” রাতে জানা গিয়েছে, স্ত্রী-র রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাঁকে ওই হাসপাতালেই করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে থাকা বৃদ্ধের নাতির বক্তব্য, “দাদু মারা গিয়েছে বলে আত্মীয়দের থেকে খবর পেয়েছিলাম। পরে খোঁজ করে জানি দাদু চিকিৎসাধীন।” এ দিন দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধানও বলেন, “আমি বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, করোনা পজ়িটিভ ওই বৃদ্ধ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”
বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর ঠিক নয় জেনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে তাঁর পরিবার ও গ্রামে। মকরামপুরে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকা বৃদ্ধের মেজো জামাই বলেন, “আমাদের কেউ আক্রান্ত হব কিনা ভেবে ভয় হচ্ছে। তবে শ্বশুরমশাই বেঁচে আছেন জেনে স্বস্তি পেলাম।”
এ দিন সকাল থেকে সিল করে দেওয়া হয়েছে বৃদ্ধের গ্রাম। ড্রোনে চালানো হচ্ছে নজরদারি। এ দিনই গোটা গ্রাম ও বাজার জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। সাউড়ির বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দুর্গেশ নন্দ বলেন, “আতঙ্ক কাটছে না। বৃদ্ধের বাড়িতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজারকেও কোয়রান্টিন করা উচিত।” এলাকার বাসিন্দা বাজার কমিটির সম্পাদক অসীম রায়ের বক্তব্য, “এলাকার একজন বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন ভেবে আমরা গ্রামবাসী আতঙ্কিত।” এ দিন এলাকায় যান খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “আমরা সবরকম সতর্কতা নিচ্ছি। এলাকা সিল করা হয়েছে। বাজার বন্ধ রয়েছে। খাবার হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করছি।”
গত জানুয়ারিতে ব্রেন টিউমারের অপারেশনের পরে সাউরির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের বাইরে যাওয়ার ইতিহাস নেই। তাহলে কীভাবে ওই বৃদ্ধ আক্রান্ত হলেন সেই সূত্র খুঁজতে কালঘাম ছুটেছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “দাঁতনের সাউরির ওই বৃদ্ধ করোনা পজ়িটিভ বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু কী ভাবে ওই বৃদ্ধ আক্রান্ত হলেন ও কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন সেই সূত্রের খোঁজ করছি। আপাতত ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা সকলকে কোয়রান্টিন করা হচ্ছে।”
বৃদ্ধের পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। বড় মেয়ের ছেলে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ১৫ মার্চ তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ফিরে খড়্গপুর স্টেশন হয়ে পটাশপুরে যান। তাঁকে ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়। অথচ বৃদ্ধের মেজ জামাই বলেন, “বড়দির ছেলে বাইরে থেকে কিছুদিন আগে ফিরে কয়েকদিন আমার শ্বশুরের কাছে ছিল। ওঁর থেকে এমনটা হল কিনা সেটাই ভাবছি।” ঘটনা স্বীকার করে ভুবনেশ্বরে হাসপাতালে থেকে বৃদ্ধের নাতি ওই যুবক বলেন, “দাদুর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি। তাই ২০ মার্চ কোয়রান্টিন ভেঙেই দাদুর বাড়িতে গিয়ে দু’দিন ছিলাম। কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy