ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণিতে জাতীয় সড়কের ধারে করোনার নমুনা সংগ্রহের কিয়স্কের এখন এমনই হাল। নমুনা সংগ্রহ বন্ধ। আমপানে বিধ্বস্ত কিয়স্ক লাগোয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের অস্থায়ী শিবিরও। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ক’দিন আগেই মন্ত্রী বলে গিয়েছেন জেলা করোনা মুক্ত। তারই মধ্যে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ফের ধোঁয়াশা তৈরি হল।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে এতদিন এই জেলায় মাত্র তিন জন আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছিল। অথচ এ পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের বড়মা করোনা হাসপাতালে (লেভেল ৩ ও ৪) ৯ জনকে পাঠানো হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের খবর। সেই সব তথ্য এতদিন তালিকাভুক্ত হয়নি। তবে বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে আরও তিন জন করোনা আক্রান্তের কথা জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আগের তিন জন সুস্থ হয়েছেন বলেও তথ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে কারা আক্রান্ত হলেন, কারাই বা সুস্থ হয়ে ফিরলেন— তা স্পষ্ট হয়নি বৃহস্পতিবারেও।
জানা যাচ্ছে, গত এপ্রিল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এক শিশু সহ ৯ জনকে বড়মায় ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁরা সবাই সুস্থ হয়ে আগেই ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তার পরে করোনা আক্রান্তদের আর বড়মায় পাঠানো হচ্ছে না, প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বড়মা হাসপাতালের টেকনিক্যাল অফিসার দেবোপম হাজরা বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার কেউ আর এখন বড়মায় ভর্তি নেই। সকলেই সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন।’’ এ দিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে নয়া আক্রান্তের তথ্য নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। আর তাতে সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ বেড়েছে।
গত ২৩ মে আমফানের পর্যালোচনা বৈঠকে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ঝাড়গ্রাম করোনা মুক্ত জেলা। তার চার দিনের মাথায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে নতুন করে তিন করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং প্রকৃত তথ্য নিয়ে গোড়া থেকেই অস্পষ্টতা রয়েছে ঝাড়গ্রামে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গোপনীয়তায় সংশয় আরও বেড়েছে। এখন আবার পরিযায়ীরা ফিরছেন। ফলে, উদ্বেগ বাড়ছে।
ঝাড়গ্রামের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আবার ২২ বছরের এক তরুণকে নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তার ১৮ বছরের ভাইয়ের করোনা পজ়িটিভ বলে জানা গিয়েছিল। অথচ ভাইয়ের বদলে দাদাকে বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানাজানির পরে ১৮ বছরের তরুণকে মানিকপাড়ায় নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়। দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরেও তাঁকে বড়মায় পাঠানো হয়নি। তবে তাঁর দাদাকে সম্প্রতি বড়মা থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন আরও ৭ জন। তার মধ্যে তিন বছরের এক শিশুও রয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে গত ১০ মে প্রথম ঝাড়গ্রামে তিন করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়। তারপরে ঝাড়গ্রাম পুরসভার তিন ঠিকাকর্মীকে বড়মায় পাঠানো হয়। দিনসাতেক আগে নয়াগ্রামের এক আক্রান্তকেও সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই তথ্য বুলেটিনে মেলেনি। তবে কি পুরনো তথ্য এখন তালিকায় সংযোজিত হচ্ছে! প্রশ্ন উঠলেও জবাব মেলেনি।
এ নিয়ে বিঁধছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম জেলার বামপন্থী দলগুলির তরফে একযোগে ফের জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে করোনা সংক্রান্ত দাবিসমূহ জমা দেওয়া হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘প্রশাসন বলছে জেলায় করোনা আক্রান্ত নেই। আবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে নতুন করে করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য জানানো হোক। না হলে বিপদ বাড়বে।’’ ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুমার হেমব্রমের ক্ষোভ, ‘‘করোনা নিয়ে জেলায় প্রহসন চলছে। প্রকৃত তথ্য গোপন করে মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy