মেদিনীপুর মেডিক্যালে মাতৃমা ভবনের সামনে অপেক্ষা করে রোগীর পরিবার। তার মধ্যেই খাবারের খোঁজে ঢুকে পড়ে গরুর দল। —নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রসূতি-কাণ্ডে মুচলেকা লেখানোর অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ বার সামনে এল হাসপাতালের টিকিট বিকৃতির অভিযোগ। রোগী যখন ওয়ার্ডে ভর্তি হন, তখন তাঁর নামে এই ‘বেড হেড টিকিট’ (বিএইচটি) দেওয়া হয়। অভিযোগ, সেই টিকিটে আগে টিপসই নেওয়া হয়েছিল পরিজনের। পরে সেখানে তাঁদের বয়ান জুড়ে দেওয়া হয়, তা এক অর্থে মুচলেকাই।
মামনি রুইদাস-সহ পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচারে (সিজ়ার) গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে মামনির। বাকি চার প্রসূতি চিকিৎসাধীন, তিনজন এসএসকেএমে, একজন মেদিনীপুর মেডিক্যালে। টিকিট বিকৃত করার অভিযোগ তুলছেন প্রসূতিদের পরিজনেরাই। তাঁদের নিশানায় অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন মিনারা বিবির ‘বেড হেড টিকিটে’র ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে টিপসই রয়েছে মিনারার বোন ফুলন খাতুনের। তার ওপরে লেখা, ‘ডাক্তারবাবুর থেকে জানলাম, অপারেশনের সময়ে যে কোনও স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন থেকে রোগী শকে চলে গেছে। যার কারণে রোগীর প্রস্রাব কম হচ্ছে। এবং অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং রোগীর জীবনহানি হতে পারে। সব জেনে চিকিৎসায় অনুমতি দিলাম।’
অভিযোগ, ওই লেখা কিংবা ওই বয়ান প্রসূতির পরিজনেরই নয়। তাঁদের থেকে শুধু টিপসই নেওয়া হয়েছিল। পরে কেউ বা কারা ওই লেখা লিখেছে। ফুলনের দাবি, ‘‘ওই লেখা আমার নয়। তবে টিকিটের টিপসইটা আমারই। সে দিন আমি সই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা (দায়িত্বে থাকা ডাক্তাররা) বলেছিল, বাঁ হাতের আঙুলে টিপসই দাও।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘স্পষ্ট মনে আছে, আমি যখন টিপ সই করি, ওই টিকিটে এমন কোনও লেখা থাকেনি। সাদা কাগজই ছিল। কেউ পরে ওটা লিখেছে।’’
ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর পরিজনের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার কথা ‘কনসেন্ট ফর্মে’। কোনও ভাবেই ‘বেড হেড টিকিটে’র উপরে নয়। ফুলনের দাবি, ‘‘আমি চার-পাঁচটা কাগজে সই করেছি। সব খালিই ছিল। কোনও কিছুই লেখা ছিল না।’’ মৃত প্রসূতি মামনি রুইদাসের ননদ মামনি দাসও বলছেন, ‘‘আমাকে বলেছিল, কয়েকটা সই লাগবে। সই করে দাও। আমি দু’টো কাগজে সই করেছি, একটা কাগজে টিপসই করেছি। আমি কিন্তু কাগজে কিছু লিখিনি। শুধু সই করেছি। ওই টিকিটে যদি কিছু লেখা থাকে, তাহলে সেটা ওরাই লিখেছে।’’ চিকিৎসাধীন রেখা সাউয়ের স্বামী সন্তোষও বলছেন, ‘‘আমার মা-কে দিয়ে কয়েকটা কাগজে সই করিয়েছে। শুনেছি, কাগজে কিছু লেখা ছিল না।’’
হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউতের মোবাইল বেজে গিয়েছে। মেসেজেরও জবাব দেননি। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিক্যালের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘বেড হেড টিকিটে সাধারণত এমন কিছু লেখা হয় না। তার জন্য কনসেন্ট ফর্ম রয়েছে। জানি না কী পরিস্থিতিতে, কী হয়েছিল।’’
এক প্রসূতির পরিজনের দাবি, ‘‘তদন্তের আওতায় এটাও আসুক। ওই হাতের লেখা কার, সেটা খতিয়ে দেখা হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy