জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু) জামিন পাওয়ায় উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। এক দিকে তাঁর অনুগামীরা সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়ে তুলেছেন ‘বস ইজ় ব্যাক’ স্লোগানে। অন্য দিকে, বিরোধীদের অনেকের বক্তব্য, মামলা এখনও বিচারাধীন। জামিন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এত উচ্ছ্বাসের কোনও কারণ নেই। বালুর অনুপস্থিতিতে দলের যে অংশ ‘অতিসক্রিয়’ হয়ে উঠেছিল, সেই শিবিরের নেতানেত্রীরা তুলনায় ‘সংযত’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
বালু গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রথম কিছু দিন তৃণমূল পরিচালিত হাবড়া পুরসভার পক্ষ থেকে বালুর জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। জগদ্ধাত্রী পুজোয় পুর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁকে ‘উপদেষ্টা’ করা হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা-ব্যানারে বালুর নাম ছিল। কিন্তু তাঁকে বনমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে হাবড়ায় বালুর নাম এবং ছবি ব্যবহার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। লোকসভা ভোটে হাবড়ায় দলের প্রচারেও তাঁর প্রসঙ্গ
ওঠেনি।
এই পরিস্থিতিতে হাবড়ায় বালুর অনুগামীরা ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েন। তাঁদের দলীয় কাজকর্ম অনেকাংশে গতি হারিয়েছিল। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বালু গ্রেফতার হওয়ার পরে হাবড়া তৃণমূলের একাংশ বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা হাবড়া সংলগ্ন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠার দৌড়ে সামিল হন। বালু জেলে যাওয়ার পরে কাকলি, নারায়ণ ছাড়াও জেলা রাজনীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত একাধিক নেতা-মন্ত্রীর ‘প্রতিপত্তি’ বেড়েছে।
এই গোষ্ঠীরই এক নেতার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘বালুদার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা একমাত্র মমতাদি-ই ঠিক করতে পারেন। আমরা ওঁর সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছি।’’
তবে বালুর অনুপস্থিতিতে গত লোকসভা ভোটে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করেন দলের একাংশ। লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি জয়ী হলেও হাবড়া বিধানসভা এলাকায় (এখানকারই বিধায়ক বালু) পিছিয়ে ছিলেন।
তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, বালুর অনুপস্থিতিতে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যায় বিজেপি।
বালু জামিন পাওয়ায় তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত এক নেতা বলেন, ‘‘এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আবার বালুদার নেতৃত্বে দল করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ দলের এই অংশের আশা, বালু ফের হাবড়ায় দলের রাশ ধরবেন।
হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহার কথায়, ‘‘আমরা খুশি। আগামী দিনে বালুদার হাত ধরেই আবার হাবড়ার উন্নয়ন হবে।’’
হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরীর আবার কটাক্ষ, ‘‘উনি তো অভিযুক্ত, নির্দোষ এখনও প্রমাণ হননি। জেলে ছিলেন, বাইরে এসেছেন। বিচার তো শেষ হয়নি। আবার জেলে যেতে পারেন। তা ছাড়া, যে ভাবে কালিমালিপ্ত হয়েছেন, তা মানুষের পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়।’’ বিষয়টিকে ‘বিজেপি-তৃণমূলের সেটিং’ বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী।
তৃণমূলের ব্যারাকপুরের সাংসদ তথা উত্তর ২৪ জেলা তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার একটা কথা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইডি-সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিন পাওয়ার ঘটনায় তা ফের প্রমাণিত হল। চোদ্দো মাস হয়ে গেল, অথচ ইডি ওঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি। তথ্য-প্রমাণ না থাকলে কোথা থেকে দেবে!’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র আবার বলেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থায় কেউ জামিন পেতেই পারেন। জামিন পাওয়া মানে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস হওয়া নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy