ভরসা: পর্যাপ্ত বাস-ট্রেকার নেই। সাইকেলে করেই তাই স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। বেোলপাহাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশ বাস্তবায়নে লাগবে বেশ কিছুটা সময়। তাই আপাতত কষ্টের হাত থেকে রেহাই নেই বেলপাহাড়ি ব্লকের বগডুবা গ্রামের জিত্কার কিস্কু, কাঁকড়াঝোরের ভীম সরেন, তালপুকুরিয়া গ্রামের বিপ্লব মণ্ডলদের মতো শ’খানেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। কারণ, বাড়ি থেকে গড়ে ২০-৪০ কিলোমিটার উজিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হবে তাদের।
ভীম, জিত্কার, বিপ্লবেরা সকলে বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুলের পড়ুয়া। আগে এই স্কুলের পরীক্ষার্থীরা কাছেই বেলপাহাড়ির একটি সরকারি আদিবাসী আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিত। কিন্তু সরকারি আদিবাসী বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে গত বছর থেকে সেখানে আর পরীক্ষাকেন্দ্র করা যাচ্ছে না। পরিবর্তে বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে শিলদার রাধাচরণ ইনস্টিটিউশনে পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যায় পড়েছে দূরের গ্রামের পরীক্ষার্থীরা। কারণ, বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুলের ১৯২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই প্রত্যন্ত পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা যোগাযোগহীন গ্রামে থাকে।
বেলপাহাড়ি থেকে চাকাডোবা হয়ে পুরুলিয়া রুটে বাস চলে। চাকাডোবা থেকে বগডুবা গ্রামের দুরত্ব দশ কিলোমিটার। বগডুবা গ্রামের পরীক্ষার্থী জিত্কার টুডু জানায়, সাইকেলে দশ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চাকাডোবা পোঁছে বাস ধরতে হবে। চাকাডোবা থেকে শিলদার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি। ফলে জিত্কারকে ৪০ কিমি দূরে যাতায়াত করতে হবে। অভিভাবক চিরু মান্ডি, বেহুলা মুড়া বলেন, “দুপুরের পরে ফেরার বাসও মেলে না। ফলে ছেলেমেয়েদের খুবই সমস্যা হবে।”বেলপাহাড়ি ও শিলদার মধ্যে দিনে গড়ে ৩০ জোড়া বাস চলে। কিন্তু বেলপাহাড়ি থেকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকাগুলির মধ্যে বাসের যোগাযোগ নেই। বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোর রুটে একটিমাত্র বাস চলে। বাকি এলাকাগুলিতে বাসের যোগাযোগ নেই। বেলপাহাড়ি থেকে ওদলচুয়া হয়ে কাঁকড়াঝোরের দূরত্ব ২৫ কিমি। বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোর পিচ রাস্তার বিভিন্ন অংশে সংযোগকারী আরও অনেক রাস্তা রয়েছে। ওই সব রাস্তা গিয়ে শেষ হয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানায়। ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী শাঁখাভাঙা, জামাইমারি, ঢাঙিকুসুমের মতো প্রত্যন্ত গ্রামে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে। কয়েক জায়গায় পাহাড় কেটে রাস্তা হয়েছে। কিন্তু এখনও ওই সব রাস্তায় বাস চলে না।
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম জেলা সদরে মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত বৈঠক করে গিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। ঝাড়গ্রাম জেলার মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক জয়দেব হোতা বলেন, “কয়েক মাস আগে সব স্কুলের মতামত নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ঠিক করা হয়েছে। যতটা সম্ভব কম দূরত্বে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” ঝাড়গ্রাম জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিয়কুমার কুণ্ডুর কথায়, “বেলপাহাড়ি রুটে নতুন কিছু বাস চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।” গত বছর দীর্ঘপথ সাইকেলে যাতায়াত করে দু’জন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অবস্থা বদলায়নি। ফলে এ বারও অগত্যা পড়ুয়াদের ভরসা সেই সাইকেলই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy