Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Tourist Spot

উদ্বোধনের বছর পার, ফেরেনি হাল

গনগনি ঘুরে দেখা গেল— কটেজ চত্বর, নজরমিনার, বসার বেঞ্চ-সহ বাহারি কংক্রিটের ছাতা এমনকি খাদের কিনারা ধরে পর্যটকদের হাঁটার রাস্তা ভরে উঠেছে ঝোঁপ-ঝাড়ে।

An image of a tourist spot

খড়্গপুর থেকে গড়বেতার গনগনি পর্যটন কেন্দ্রের ‘ভার্চুয়াল’ উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গনগনি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৬
Share: Save:

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের কথা। খড়্গপুর থেকে গড়বেতার গনগনি পর্যটন কেন্দ্রের ‘ভার্চুয়াল’ উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা সে দিন বলেছিলেন, ‘‘গনগনি বলে একটা জায়গা রয়েছে। খুবই সুন্দর। আমরা অলরেডি কটেজ করে দিয়েছি। সুন্দর ভাবে তৈরি করে দিয়েছি।’’

তারপর ঘুরেছে বছর। কিন্তু কাটেনি রাজ্যের নতুন পর্যটন কেন্দ্র গনগনির অব্যবস্থা দৈন্য চিত্র। কটেজে রাত্রিযাপন করতে ‘সে ভাবে’ আসছেন না পর্যটকেরা। যে পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত ভ্রমণ-পিপাসু বাঙালির ‘নয়া-ডেস্টিনেশন’, সেই কেন্দ্র থেকেই কি মুখ ফেরাচ্ছেন পর্যটকেরা? উঠছে এমন প্রশ্নই! তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মাত্র ৯০টির মতো বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে গ্রীষ্মের মরসুমে বুকিং ছিল হাতেগোনা। কিন্তু কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়েছিল, তার অনেকগুলিই পূরণ হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যুক্তি, অর্থ সঙ্কটের জেরেই এমন পরিস্থিতি। ফলে ঝোঁপ-ঝাড় আর বিষাক্ত পার্থেনিয়ামে ঢাকছে পর্যটন কেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকা।

গনগনি ঘুরে দেখা গেল— কটেজ চত্বর, নজরমিনার, বসার বেঞ্চ-সহ বাহারি কংক্রিটের ছাতা এমনকি খাদের কিনারা ধরে পর্যটকদের হাঁটার রাস্তা ভরে উঠেছে ঝোঁপ-ঝাড়ে। অব্যবস্থার ছবি রয়েছে আরও। চারটি কটেজের মধ্যে মাত্র একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নিয়মিত ‘রিচার্জ’ না করায় কটেজের এলইডি টিভিও অচল। ব্লক প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে একটি রেস্তরাঁ চালু করেছে। তবে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, স্থানীয় মানুষের আগ্রহ লক্ষ্যণীয় ভাবে কমছে পর্যটক বিমুখতায়। সপ্তাহ শেষে ঘাটাল থেকে সপরিবারে গনগনি বেড়াতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চন্দ্রনাথ মহন্ত। তাঁর ভাষায়, ‘‘গনগনিতে এসে এত ঝোঁপ-জঙ্গল দেখে ভয় হচ্ছিল বিষধর সাপ বা পোকামাকড়ের উৎপাত না থাকে! পর্যটন কেন্দ্র তো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাই উচিত।’’

জানা গিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পর্যটন দফতরের অর্থানুকূল্যে গনগনিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়া হয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে। কাজটি করে পূর্ত দফতর ও রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন’। অর্থ বরাদ্দ, প্রতিশ্রুতির পরও কেন এমন অব্যবস্থা? জানা গিয়েছে, যা অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল তা কেন্দ্রের পরিকাঠামো গড়ার জন্যই। সাজানো বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য আলাদা অর্থ করেনি কোনও দফতরই। পুরোটাই পর্যটকদের বুকিংয়ের অর্থে চালানোর পরিকল্পনা করেছিল গড়বেতা ১ ব্লক প্রশাসন। সেই বুকিংই কম হওয়ায় টান পড়েছে ভাঁড়ারে। ধার-দেনা করেও করতে হয়েছে অনেক কাজ। সেই দেনা শোধ করা নিয়েও ঘোর চিন্তায় ব্লক প্রশাসন। বরাদ্দ না থাকার ফলে কটেজের শয্যা, আসবাবপত্র-সহ ঘর সাজানোর সামগ্রী সরবরাহকারী এক ব্যক্তির বকেয়া পড়ে রয়েছে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। এ ছাড়া জেনারেটরের তেল ও তার ভাড়া বাবদ বকেয়া প্রায় দু’লক্ষ টাকার মতো। সাফাইকর্মী, নৈশপ্রহরীদের বেতন বাকি প্রায় চার-পাঁচ মাস।

গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষও মানছেন, ‘‘পর্যটকদের বুকিং কম হচ্ছে। ফলে অর্থের জোগান কমছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্তদের নিয়মিত মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার কেন্দ্রের নির্দেশে একশো দিনের কাজও বন্ধ। ফলে সেই শ্রমিকদের সাফাইয়ের কাজে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ এই প্রসঙ্গে বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজা বলেন, ‘‘পর্যটকদের আকর্ষণ কমেনি, জেলা থেকে অর্থ এলেই বকেয়া সব মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tourist Spot Garbeta Gongoni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy