অবরুদ্ধ: চন্দ্রকোনায় নিকাশি নালার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র
মশা মারার স্প্রে মেশিন মাত্র দু’টি। ধোঁয়া স্প্রে করার কোনও যন্ত্রও নেই। দিন দশেক আগেই মশা নিধনের জন্য রাসায়নিক তেলও ফুরিয়ে গিয়েছে। ফলে এখন ওই কাজও বন্ধ। ডেঙ্গি বা মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতে রাজ্য সরকার আগেভাগে সতর্ক থাকার জন্য পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ এসেছে চন্দ্রকোনা পুরসভাতেও। কিন্তু বাড়ি বাড়ি প্রচার দূরের কথা মশা মারতে চন্দ্রকোনা পুরসভা উদ্যোগীই হয়নি বলে অভিযোগ। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ পুরসভার বাসিন্দারা। যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান অরূপ ধাড়ার সাফাই, “তেল কিনব কিনব বলে কেনাই হচ্ছে না। তবে এ বার জোরকদমে তেল স্প্রে করার কাজ শুরু করব।”
চন্দ্রকোনা শহরে নিয়মিত নালা-নদর্মা সংস্কার হয়নি। নালায় মশার উৎপাতও কম নয়। অলিগলিতে নোংরা-আবর্জনায় ভর্তি। বাড়ির নোংরা ডাঁই হয়ে জমছে নালা গুলিতে। আর তার থেকে লক্ষ লক্ষ মশার জন্মও হচ্ছে প্রতিদিন। শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরলেই এই ছবি স্পষ্ট। মশার দাপটে অতিষ্ঠ শহরের নাগরিকেরাও। কিন্তু মশা মারতে ঠুঁটো চন্দ্রকোনা পুরসভা।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বছর এই জনপদে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ছড়িয়েছিল। সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে কেউ আক্রান্ত না হলেও ম্যালোরিয়ায় ভুগেছিলেন কমবেশি শ’খানেক বাসিন্দা। কিন্তু তাতেও হুঁস ফেরেনি পুর-কর্তৃপক্ষের। সূত্রের খবর, পুরসভায় ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। জনসংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার। সাড়ে ছ’হাজার পরিবারের এই শহরে সিংহভাগ নদর্মাই কাঁচা। শহরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, “মেশিনের সাহায্যে তেল স্প্রে করে কী ভাবে মশা মারা হয়-এখনও সেই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি।” পুরসভারই এক কাউন্সিলর বললেন, “স্রেফ মশা নিধন এবং শহরের বাসিন্দাদের সচেতন করতেই সরকারি ভাবে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগের অভাবেই এই দশা।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক কর্মীর ক্ষোভের সুরেই বললেন, “স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে একদিন একটি কর্মশালা হয়েছিল ।মশা মারতে সরকারি নির্দেশ আসার পর এতটুকুই এগিয়েছে পুরসভা। বরাদ্দের টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। অথচ তেল কেনা হয়নি। মেশিন কেনারও নাম নেই।’’
শহরের জয়ন্তীপুর, খিড়কিবাজার, মল্লেশ্বরপুর, নবকুঞ্জতলা, ইলামবাজার প্রভৃতি এলাকায় নালায় আবর্জনার স্তূপ। শহরের বহু বাড়িতেই ফুলের চাষ হয়। এখন বহু টব খালি। মোড়ে মোড়ে ডাবের খোলা ভর্তি। খাবার দোকানগুলির সামনে থার্মোকলের থালা-বাটি, ডিমের খোলা, প্লাস্টিকের গ্লাস ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে। শহরের নীলগঞ্জের এক বধূ পাপিয়া ঘোষ বললেন, “আমরা বাড়ি পরিষ্কার রাখলে কী হবে, শহরের রাস্তা এবং নালা তো পরিষ্কার নয়। এতটুকু তো শহর। একটু বৃষ্টি হলে মশার আস্তানা তখন বাড়িতেই।”
প্রশ্ন, নবান্নের পাশাপাশি সুডার (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) নির্দেশের পরও কেন চন্দ্রকোনা শহরে এই হাল? চেয়ারম্যান অরূপ ধাড়া বললেন, “সামনের সপ্তাহ থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার এবং তেল স্প্রে’র কাজ শুরু করে দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy