Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ভোটের মুখে তাজপুর তরজা

বেশ কয়েক বছর আগে তাজপুরে সমুদ্র বন্দর গড়তে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক কাজই এখনও শুরু হয়নি। উল্টে তাজপুরে বন্দর তৈরি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।

এখানেই বন্দর গড়ে ওঠার কথা। নিজস্ব চিত্র

এখানেই বন্দর গড়ে ওঠার কথা। নিজস্ব চিত্র

কেশব মান্না
তাজপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

ভাঙাচোরা পাকা রাস্তা ধরে আইলান থেকে দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। রাস্তা এতটাই সংকীর্ণ যে একটা গাড়ি গেলে সাইকেল বা মোটরবাইককে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর-১ ব্লকের এই তাজপুর গ্রাম ঘিরেই ভোট মরসুমে তীব্র হতে পারে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত।

বেশ কয়েক বছর আগে তাজপুরে সমুদ্র বন্দর গড়তে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক কাজই এখনও শুরু হয়নি। উল্টে তাজপুরে বন্দর তৈরি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, তাজপুরে রাজ্য সরকার একাই বন্দর গড়বে। এর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ধার্য হয়েছে। ওই টাকায় তাজপুরের সঙ্কীর্ণ রাস্তার জায়গায় চার লেনের নতুন সড়ক, বালিসাই থেকে বন্দরের সঙ্গে রেললাইনে যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে। আর এ সবে আশার আলো দেখছেন তাজপুরের মানুষ। একই সঙ্গে কুরে কুরে খাচ্ছে আশঙ্কাও—সত্যি বন্দরটা হবে তো!

তাজপুর লাগোয়া জলধা গ্রামের বাসিন্দা এক পানদোকানি বলছিলেন, ‘‘তাজপুরে বন্দর হবে বলে তো শুনে আসছি। বন্দর হলে এখানকার বহু মানুষের রোজগারের সুযোগ হবে। এলাকার খোলনলচেই বদলে যাবে। কিন্তু কতদিনে তা হবে সেটাই প্রশ্ন।’’ জলধা গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা সুশান্ত দোলইয়ের বক্তব্য, ‘‘ভেবেছিলাম বন্দর তৈরি হলে কাজের সুযোগ পাব। কিন্তু মাপজোক ছাড়া তো আর কোনও কাজই এগোয়নি।’’ ২০১৬ সালে তাজপুরে বন্দর গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকারকে ‘সম্মতি’ দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। চুক্তি হয়েছিল, বন্দর গড়ে তুলতে যা খরচ হবে তার বেশিরভাগটা কেন্দ্র দেবে। বাকিটা দেবে রাজ্য সরকার। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, রামনগর- ১ ব্লকের চাঁদপুর, লছিমপুর, জলধা, জামুয়া, শঙ্করপুরের একাংশ নিয়ে তাজপুর বন্দর তৈরি হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে চারশো একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপর জমি জরিপ হয়েছে, গ্লোবাল টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই, আর সে রকম কাজ এগোয়নি। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে উপকূল রক্ষীবাহিনীর লোকজন স্পিড বোটে চেপে এসেছিলেন এবং মাপজোক করে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, কিছু দিন আগে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসে স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরি জানিয়েছিলেন শীঘ্রই বন্দরের কাজ শুরু হবে। তারপরেও তেমন তোড়জোড় নজরে পড়ছে না। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘আগামী ছ’মাসের মধ্যে তাজপুরে বন্দর তৈরির কাজ শুরু হবে এবং তা রাজ্য সরকার একার টাকাতেই করবে।’’ আর কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমারের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার তাজপুরে একক উদ্যোগে বন্দর তৈরি করবে শুনেছি। এ ব্যাপারে আমাদের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’’

তবে তাজপুরের অবস্থা যাই হোক, এখানে বন্দরের ভবিষ্যৎ যে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচারে জায়গা পাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বিজেপির জেলা সভাপতি (কাঁথি) তপনকুমার মাইতির বক্তব্য, ‘‘বাংলায় প্রকৃত উন্নয়নে রাজি নয় তৃণমূল। তাই কেন্দ্র সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করা সত্ত্বেও তাজপুরে বন্দর তৈরির কাজ শুরু হয়নি। এখন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের টাকায় যে ভাবে বন্দর গড়বেন বলছেন, তা আদৌ সম্ভব নয়।’’ তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির দাবি, ‘‘তাজপুরে বন্দর হবেই। তবে লোকসভা নির্বাচন থাকায় এখনই কিছু হচ্ছে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Conflict Road Tajpur Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE