Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
তেলের দামের ওঠানামায় কী প্রভাব পরিবহণে। খোঁজে আনন্দবাজার
Bus Owners

খুঁড়িয়ে চলছে বাসের চাকা

বাস মালিকদের একাংশ বলছেন, চার চাকায় লাভের গুড়ের একটা বড় অংশ এতদিন খাচ্ছিল তেল। তার সঙ্গে এখন জুড়েছে বাড়তে থাকা গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম, বিমার প্রিমিয়ামও।

গড়বেতা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের অপেক্ষায় বাস। নিজস্ব চিত্র

গড়বেতা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের অপেক্ষায় বাস। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী , রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে...’।

ছোট হোক বা বড়, অধিকাংশ বাস মালিকেরাই বোধহয় মনে মনে গাইছেন প্রচলিত এই লোকগানই!

বাস মালিকদের একাংশ বলছেন, চার চাকায় লাভের গুড়ের একটা বড় অংশ এতদিন খাচ্ছিল তেল। তার সঙ্গে এখন জুড়েছে বাড়তে থাকা গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম, বিমার প্রিমিয়ামও। খরচ সামলাতে না পেরে টিকিটের দাম বাড়ালে যাত্রীদের সঙ্গে শুরু হচ্ছে বচসা। তাই অনেক বাস মালিক প্রতিদিনের পরিবর্তে সপ্তাহে কয়েকদিন বাস চালাচ্ছেন। কেউ কেউ তো একেবারে রুট থেকে উঠিয়ে দিচ্ছেন বাস। এ তো গেল মালিকদের যন্ত্রণা, যাত্রীদের যন্ত্রণাও কম কিছু নয়। তাঁদের বক্তব্য, মুখের কথাতেই বাড়ছে ভাড়া। বাস নিয়মিত মিলছেও না। অগত্যা বাসের পরিবর্তে অটো বা টোটো বেছে নিচ্ছেন অনেক যাত্রী।

বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৯৩ টাকার আশপাশে। এক লিটার ডিজেলে বড় বাস সাধারণত সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার যায়। মাঝারি বাসগুলি যায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার। আর তুলনায় কম সংখ্যক যাত্রীর ছোট বাসগুলি প্রতি লিটারে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত যায়।

বাস মালিকদের বক্তব্য, রুট ছোট হোক বা বড়। তেল খরচ বাদে রাস্তায় বাস নামলেই মালিকদের একটা পরিমাণ খরচ থাকেই। চালক-সহ বাস কর্মীদের বেতন, রাস্তার কর ছাড়াও অন্য খরচও রয়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় রুটেই গড়ে দৈনিক খরচ পড়বে তেল-সহ আট হাজার টাকা। লম্বা রুটে খরচ আরও বেশি। হাওড়া রুটের বাস মালিক অরূপ ঘোষ ও সত্য ঘোষ দু’জনই বলেন, ‘‘এখন সব দিন বাস চালানো যাচ্ছে না। সপ্তাহে দু’দিন বাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”

আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে গড়বেতা রুটের তিন থেকে চারটি বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলি বাসের মালিক কর্মীদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছেন না। কেনও এই অবস্থা? বাস মালিকেরা বলছেন, ‘‘তেলের দাম তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে সম্প্রতি টায়ার-সহ বাসের যন্ত্রাংশের দরও বেড়েছে অনেকটা।’’

উদাহরণ দিয়ে এক বাস মালিক বলেন, ‘‘ভাল মানের টায়ারের জোড়ার দাম আগে যা ছিল, সম্প্রতি তা সাত থেকে আট হাজার টাকা বেড়েছে। যন্ত্রাংশের দামও লাফিয়ে বেড়েছে। এক টুকরো লোহার পাতিতে দাম বেড়েছে ৫০০-৭০০ টাকা।’’ চন্দ্রকোনা রোডের কয়েকজন বাস মালিক বলছেন, ‘‘হঠাৎ করে ইন্সুরেন্স জমার টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় সব দিক দিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’ গড়বেতা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রামমোহন মণ্ডল বলেন, ‘‘খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, আয় কমছে, এই অবস্থায় রাস্তায় বাস নামানোই দায়, বাস ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়।’’

এই পরিস্থিতিতে অবশ্য নিজেদের মতো করে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে। তা-ও আবার চড়া হারে। কোনও রুটে আবার পুরনো ভাড়ার থেকে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। ঘাটাল-মেদিনীপুর-সহ স্থানীয় রুট হোক কিংবা হাওড়া, কলকাতা সব রুটেই ভাড়া বেড়েছে। সরকারি ভাবে ভাড়া না বাড়লেও বছর খানেক ধরেই বেশি টাকা দিয়ে বাস উঠতে হচ্ছে পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দাদের।

ঘাটাল বাস ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে প্রভাত পান এবং পুলক প্রামাণিক বলছিলেন, ‘‘দ্রত তেলের দাম কমনো জরুরি। তা না হলে এক সময় বহু বাস বন্ধ হয়ে যাবে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত বলেন, “তেলের দাম বেড়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন রুটে পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক।”

যাত্রীরা বলছেন, বাস অনিয়মিত। তাই ভরসা করতে হচ্ছে অটো, টোটোর উপর। অন্য দিকে বাস মালিকেরা বলছেন, পারমিটহীন অটো-টোটোরা যাত্রী নিচ্ছে বলেই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বাসকে। সরকারি হস্তক্ষেপ নেই। ধাঁধার চেয়েও জটিল হচ্ছে পরিবহণ সমস্যা।

বছরের পর বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে লোকগান— ‘গাড়ি চলে না’। সে গানের শেষে রয়েছে, ‘সামনে বিষম অন্ধকার/করতেছে তাই ভাবনা’।

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Owners Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy