অবাকপানে: গ্রহণ শুরু (বাঁদিকে)। তা দেখতে সানফিল্টারে চোখ। বৃহস্পতিবার খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র
গ্রহণের সময় বন্ধ রাখতে হবে রান্না, চলবে না খাওয়া-দাওয়াও— না হলে নাকি অনিষ্ট অনিবার্য! কোথাও এই চিরাচরিত কুসংস্কার ভাঙলেন শিক্ষক এবং স্কুল পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের অকাট্য যুক্তির কাছে হার মেনে গ্রহণের চলাকালীন মুখে লজেন্স তুললেন এক পুরোহিতও। কোথাও কুসংস্কার ভাঙতে পথে নামলেন সায়েন্স সোসাইটির সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার গোপীবল্লভপুরে স্থানীয় মানুষের কুসংস্কার ভাঙতে ময়দানে নেমেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রধান। বছর পঁয়তাল্লিশের প্রসেনজিৎ নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা এসসি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। থাকেন গোপীবল্লভপুরে। আবার শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর হল বৈষ্ণবদের তীর্থক্ষেত্র। স্বভাবতই চিরাচরিত প্রথা মেনে এলাকার অনেক বাড়িতেই সূর্যগ্রহণ চলাকালীন রান্না কিংবা খাওয়া-দাওয়া হয়নি।
‘গোপীবল্লভপুর সায়েন্স সোসাইটি’ নামে একটি বিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক প্রসেনজিৎ। প্রসেনজিতের সংস্থার বেশিরভাগ সদস্য হল স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়া। এ ছাড়াও পাঁচকাহানিয়া এসসি হাইস্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক সন্দীপন দাস, চাঁদাবিলা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুদীপ্ত জানা-র মতো কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকাও বৃহস্পতিবার প্রসেনজিতের সঙ্গে পথে নেমেছিলেন। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি মোড়ে রাস্তার ধারে চেয়ার-টেবিল পেতে সর্বসাধারণের উদ্দেশে মাইকে প্রচার করে সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে অবহিত করেন প্রসেনজিৎ ও তাঁর দল। পাশাপাশি, সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য পথচলতি মানুষকে ‘সানফিল্টার’ও দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সূর্যগ্রহণ চলাকালীন পথচলতি মানুষজনকে লজেন্স খাইয়ে কুসংস্কারও ভাঙানো হয়। তবে গোপীবল্লভপুরের অধিকারী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু পরিবার রান্না না করে অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের সচেতন করে লজেন্স খাওয়ানো হয়। পড়ুয়াদের চাপে অধিকারী পাড়ার স্থানীয় এক মন্দিরের পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় পাণিগ্রাহীও লজেন্স খান। স্কুল পড়ুয়া কেয়া সিংহের কথায়, ‘‘ওই পুরেহিতকে সূর্যগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বুঝিয়ে তাঁকে লজেন্স খেতে অনুরোধ করি। তিনি লজেন্স খেয়েছেন।’’ মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ব্যাখ্যা সঠিক। তবে দীর্ঘদিনের সংস্কার থেকেই আমরা কিছু শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে চলি।’’ প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘সূর্যগ্রহণ নিয়ে মানুষের কুসংস্কার দূর করতেই আমরা পথে নেমেছিলাম।’’
আবার বেলদা বাজার এলাকায় সানফিল্টারে চোখ রেখে সূর্যগ্রহণের দেখলেন আট থেকে আশি। সানফিল্টার থেকে চোখ সরানোর পর সকলের হাতে তুলে দেওয়া হল বিস্কুট। বেলদা গাঁধী পার্কে বিশেষ শিবির করেছিল বিজ্ঞান সংগঠন ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ এবং ‘বেলদা সায়েন্স’এর সদস্যরা।
বিজ্ঞান সংগঠনটির বক্তব্য, ‘‘গ্রহণের সময় খেতে নেই। সেটা ভাঙতেই এই কর্মসূচি।’’ বৃহস্পতিবার বিস্কুট হাতে নিয়ে স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ওসব সত্যিই কুসংস্কার। সূর্যগ্রহণ কেন হয় তার ব্যাখ্যা শোনালেন বিজ্ঞান সংগঠনের সদস্যরা। ভাল লাগল।’’ অন্যদিকে, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় বিস্কুট খাইয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাল বিজ্ঞান মঞ্চের ঘাটাল শাখাও। বৃহস্পতিবার ঘাটাল শহরের সত্যজিৎ রায় মুক্তমঞ্চে বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে গ্রহণ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই উপস্থিত সকলের হাতে দেওয়া হয় বিস্কুট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy