শিবখোলার রূপ মনভোলানো। ছবি: সংগৃহীত।
দিনরাত কাজের চাপে হাঁসফাস। চাইলেও ছুটি মেলে না। অথচ মন চাইছে সব ছেড়ে তেপান্তরে পাড়ি দিতে। কিন্তু কোথায় তেপান্তর, কোথায়ই বা সে সুযোগ!
তবে দিন দুই ছুটির ব্যবস্থা করা কি খুব কঠিন? তা হলে ঘুরে আসতে পারবেন শিলিগুড়ির অদূরে এক ‘স্বর্গরাজ্য’ থেকে। পাহাড়, নদী, চা-বাগান—সমস্ত কিছুরই দেখা মিলবে সেখানে। এমনকি পাহাড়ি পাকদণ্ডী পেরোনোর সময় দোসর হতে পারে বাঁশি বাজিয়ে ছন্দে চলা টয়ট্রেনও।
নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি হয়ে উত্তরবঙ্গে চলে যান সকলেই। কেউ আবার আলিপুরদুয়ার হয়ে ডুয়ার্স বেছে নেন। তবে শিলিগুড়ি এবং তার আশপাশেও যে এমন প্রকৃতির সান্নিধ্য মেলে, তার খোঁজ ক’জনই বা রাখেন?
জনবহুল শহর থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই পৌঁছনো যায় নিসর্গের কাছে। পাহাড়ি গ্রামটির পরিচিতি শিবখোলা নামে। সেখানেই ছোট-বড় পাথরের উপর দিয়ে সশব্দে বয়ে চলেছে জলধারা। কোথাও নদী খরস্রোতা, কোথাও আবার স্রোত বেশ কম। নদী পারাপারের জন্য স্থানে স্থানে রয়েছে বাঁশের সাঁকো। মাঝেমধ্যে সেই শব্দ ছাপিয়ে যায় পাখির ডাক। গাছের আনাচকানাচ থেকে ডেকে ওঠে তারা। মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে নদীর ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকলে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়, হুঁশ থাকে না। তখন কোথায় কাজ, কোথায়ই বা হতাশা!
গ্রামের নাম শিবখোলা কেন, তা নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মত। পাহাড়ি এলাকায় খোলা বলতে নদী বোঝায়। তাই অনেকে বলেন, এখানে বয়ে চলা নদী থেকেই গ্রামের নাম। আবার এই অঞ্চলেই রয়েছে শিবের পুরনো মন্দির। কেউ বলেন, শিবের নামেই শিবখোলা।
তবে নাম যেখান থেকেই আসুক, শিবখোলার রূপ মনভোলানো। নদীর একপাশে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প যেখান থেকে ট্রেকিং, পাখি দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
আসলে বেড়ানোর উদ্দেশ্য সকলের কাছে ভিন্ন। স্থানীয়েরা শিবখোলায় আসেন চড়ুইভাতি করতে। পক্ষী পর্যবেক্ষকরা আসেন পাখি দেখার সন্ধানে। কেউ আসনে পাহাড়ি পথে হেঁটে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে। আবার কেউ চান নদীর ধারে, পাহাড়ের কোলে হোমস্টে-তে বসে কিছু না করে অলস ভাবে সময় কাটাতে।
তবে উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, এ জায়গা ভাল লাগবে সকলেরই। গ্রামের অদূরেই রয়েছে সেপাইধুরা চা-বাগান। শিবখোলা থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। রংটং হয়ে আসার সময় সেপাইধুরার বাগানে ঘুরে আসে যায়। চাইলে পায়ে চলা পথে শিবখোলা থেকে কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে আসতে পারেন। আর কোথাও যেতে না চাইলে ঘুরে নিন গ্রামে নদীর আশপাশে। পাহাড়ি ফুলের বাগানে সেজে উঠেছে এখানকার রংচঙে কাঠের বাড়িগুলি। সংখ্যা হাতেগোনা। দোকানপাট খুঁজলে একটা-দুটো মিলবে।
শিবখোলা জায়গাটি মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির দ্বারা বেষ্টিত। এখানে দু’-তিনটি দিন অলস ভাবে যেমন কাটিয়ে দেওয়া যায়, তেমনই ঘুরে নেওয়া যায় লাটপাঞ্চার, অহলদাড়া, মহালদিরামও। অবশ্যই দেখে নিতে পারেন পাহাড়ের গায়ে পুরনো শিবমন্দির। চারপাশে রঙিন পতাকা দিয়ে সাজানো। রয়েছে বড় বড় ঘণ্টা। ছড়ানো চত্বরে বাঁধানো মন্দির।
শিবখোলা দার্জিলিং জেলায়। চাইলে এখান থেকে কার্শিয়াং, দার্জিলিং, কালিম্পং যে কোনও জায়গাতেই যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
শিবখোলা অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে তাঁবু, কটেজ রয়েছে থাকার জন্য। থাকার সঙ্গেই খাওয়ার ব্যবস্থা।
কী ভাবে যাবেন?
শিলিগুড়ি থিকে রংটং হয়ে শিবখোলা। শিলিগুড়ি থেকে ২৭ কিলোমিটার, রংটং থেকে ১২ কিলোমিটার। ট্রেনে হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন হয়ে আসতে পারেন। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সড়কপথেও আসা যায়। দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।
কলকাতা থেকে দু’দিনে কি ঘোরা সম্ভব?
যদি কেউ শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেন ধরেন, পরদিন সকালেই পৌঁছে যাবেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখান থেকে শিবখোলা পৌঁছতে গাড়িতে বড়জোর ঘণ্টা দুই। সেই রাতটা থেকে, পরদিন ঘুরে এনজেপি থেকে সন্ধ্যার ট্রেন ধরলে তার পরদিন ভোরেই পৌঁছে যাবেন হাওড়া কিংবা শিয়ালদহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy