Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জয়নগরের ‘বুক ব্যাঙ্ক’ ভরসা দিয়েছে দুঃস্থ পড়ুয়াদের

বতর্মানে ওই ব্যাঙ্কে ৫ লক্ষ টাকার বই রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কের তহবিলে রয়েছে ৩ লক্ষ টাকা। সেই  টাকার সুদ থেকেও কেনা হয় নতুন বই।

পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বই। নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

পাঠ্যপুস্তকের অপরিসীম গুরুত্ব উপলব্ধি করেই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘বুক ব্যাঙ্ক’। এক সময়ের সেই চারাগাছই এখন মহীরূহ হয়ে ছায়া জুগিয়ে চলেছে অসংখ্য দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের।

বতর্মানে ওই ব্যাঙ্কে ৫ লক্ষ টাকার বই রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কের তহবিলে রয়েছে ৩ লক্ষ টাকা। সেই টাকার সুদ থেকেও কেনা হয় নতুন বই। শুধু তাই নয়, হলদিয়া মিতসুবিশি, হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের মতো শিল্প সংস্থাও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন এই ‘বুক ব্যাঙ্কে’র।

হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামে জয়নগর হাইস্কুল। তফসিলি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই স্কুলে প্রতি বছর ছেলেমেয়েদের হাতে নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন বই তুলে দেওয়া হয় বুক ব্যাঙ্ক থেকে। এবার হলদিয়ার আরও দশটি স্কুলের দু’জন করে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক ও সহায়িকা দেওয়া হয়েছে।

‘বুক ব্যাঙ্ক’-এর প্রধান উদ্যোক্তা জয়নগর স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক কানাই মোহন্ত বলেন, ‘‘এক সময় অন্যের কাছে বই চেয়েচিন্তে পড়াশোনা করেছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বই কতটা অপরিহার্য। সেই ভাবনা থেকেই ‘বুক ব্যাঙ্ক’-এর শুরু জয়নগর হাইস্কুলে। তিনি জানান, ২০০৮ সালে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার এই স্কুলে সহকর্মী শিক্ষকদের সক্রিয় সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ‘বুক ব্যাঙ্কে’ পথ চলা। মূলত, গরিব ছেলেমেয়েরা যারা স্কুলছুট, তাদের স্কুলে ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ। কিছু কিনে, কিছু চেয়ে চিন্তে তিল তিল করে গড়ে ওঠা এই বুক ব্যাঙ্কে এখন ৫ লক্ষ টাকার বই রয়েছে। বর্তমানে এই সম্পদের দেখভাল করে স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা। প্রতি বছর পড়ার পর সেই বই ফেরত নেওয়া হয়।

স্কুল সূত্রে খবর, বই পেতে গেলে পড়াশোনা করতে হবে—এই শর্তেই প্রতি ক্লাসের প্রথম ৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে দেওয়া হয় বই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই গরিব পরিবারের। তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা খুশি।’’

সৌম্যদীপ দাস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসে প্রথম হওয়া সৌম্যদীপের বাবা শিবশঙ্কর দাস ভ্যানরিকশা চালান। শিবশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘স্কুল পাশে না থাকলে ছেলের পড়াশোনা সম্ভব হত না।’’ দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী রাণুশ্রী দাসের বাবা তপন দাস একজন শ্রমিক। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন বই কেনার কথা ভাবতেই হয় না। শুধু বই নয়, খাতাও স্কুল থেকে দেওয়া হয়।’’ শুধু নিজের স্কুল নয়, প্রতিবেশী স্কুলের দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদেরও পাশে দাঁড়িয়েছে বুক ব্যাঙ্ক। হলদিয়া বাজিতপুর সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুমনা পাহাড়ি জানান, দরিদ্র ছেলেমেয়েদের হাতে বই তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Book Bank Haldia Sutahata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE