২১ ডিসেম্বর কাঁথিতে সভা শুভেন্দু অধিকারীর। বিজেপির সভায় জমায়েতের লক্ষ্য ৫০ হাজার। ফাইল চিত্র।
কাঁথিতে মাত্র ১৭ দিন আগে সভা করে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অধিকারীদের তালুকে সেই সভার পরে তৃণমূল দাবি করেছিল, লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছে। শাসকদলের সেই দাবিকে ‘সত্যি’ ধরলে পদ্ম শিবিরের লক্ষ্যই ‘অর্ধেক’! বুধবার, ২১ ডিসেম্বর নিজের এলাকায় সভা রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সেই সভার ২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার বিজেপি অভিযোগ করছে, তাদের সভা বানচালের চেষ্টা করছে শাসক শিবির। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের ভয়ও দেখানো হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে কাঁথির রাশ থেকেছে অধিকারী পরিবারের হাতে। রসুলপুর মোহনা তীরবর্তী এই ছোট্ট শহরে শিশির অধিকারী এবং তাঁর পুত্রদের প্রভাব প্রশ্নাতীত। সেখানেই সভা করবেন শুভেন্দু। অথচ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সভায় যে জমায়েত হয়েছিল, তার প্রায় অর্ধেক ‘টার্গেট’ নিয়ে মাঠে নামছেন শুভেন্দু অনুগামীরা। অভিষেকের পাল্টা সভায় শুভেন্দু নিজের তালুকে শক্তিপরীক্ষা দেবেন, এটাই রাজনৈতিক ভাবে ‘কাম্য’। কিন্তু তার আগেই কেন ‘লক্ষ্য’ কম? প্রশ্ন অন্যান্য শিবিরের।
যে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী জনসভা করেন সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষা দিতে। অর্থাৎ, তিনি সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, এলাকায় তাঁর বা তাঁর দলের ‘শক্তি’ সবচেয়ে বেশি। যত বেশি ভিড়, তত বেশি শক্তি। জনতার কৌতূহলও ভিড়ের পরিমাণ নিয়েই। সে কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১ জুলাইয়ের সভা বা অন্য কোও রাজনৈতিক দলের ব্রিগেডের সভায় প্রথম প্রশ্ন থাকে— ভিড় কত হল।
কাঁথির বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বুধবার শুভেন্দুর সভায় কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের জমায়েত হবে। যদিও তৃণমূলের দাবি, যে মাঠে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতার সভা, সেখানে অত লোক ধরার জায়গা নেই। তাই তাঁদের নেতা অভিষেকের সভার সঙ্গে শুভেন্দুর সমাবেশের কোনও তুলনাই চলে না। অর্থাৎ, তৃণমূলের দাবি অনুয়াযী, মাঠের পুরো জায়গার নিরিখে আগেই ‘হার’ হয়েছে বিজেপি তথা শুভেন্দুর। তবে বিরোধী দলনেতার সভা সফল করতে প্রচারে কোনও খামতি রাখছে না পদ্ম শিবির। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে পথসভা, মিছিল করছে তারা। বার্তা একটাই— ‘২১ ডিসেম্বর কাঁথি চলো’। কিন্তু পাশাপাশিই বিজেপি এই অভিযোগ করাও শুরু করেছে যে, শুভেন্দুর সভা বানচাল করার চেষ্টা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তারা তুলে আনছে কাঁথির অদূরে জুনপুটের রাস্তায় বিজেপির সভার প্রচারে তৈরি তোরণের ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা।
এখানেই জনতার খটকা লাগছে। যে দিন অভিষেক কাঁথিতে সভা করেছিলেন, সে দিনই অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘পাল্টা সভা’ করেছিলেন শুভেন্দু। জনসমাগমের নিরিখে শুভেন্দুর সভা অভিষেকের ধারেপাশে পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সভায় আসতে তৃণমূল লোকজনকে বাধা দিয়েছে। ভয় দেখিয়েছে। হামলাও করেছে। শুভেন্দুর সে কথা একেবারে অযৌক্তিক বলে মনে হয়নি। কারণ, তাঁর সভা ছিল অভিষেকের ‘দুর্গে’। ঠিক সেখানেই কাঁথির ক্ষেত্রে বিজেপির অভিযোগ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, কাঁথি অধিকারী পরিবারের ‘খাসতালুক’ বলেই পরিচিত। সেখানে তাদের ‘কর্তৃত্ব’ও প্রশ্নাতীত হওয়ার কথা। সেই কাঁথিতে তৃণমূলের লোকেরা বিজেপির সভা বানচাল করার চেষ্টা করলে এবং বিজেপি সেই অভিযোগ করলে প্রকারান্তরে যা বোঝায়, তা হল— এলাকার উপর তেমন ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেই বিজেপির। তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো যাচ্ছে।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের অভিযোগ, বার বার বাধার মুখে পড়ছেন তাঁরা। শুভেন্দুর সভায় যাতে জনসমাগম কম হয়, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করছে শাসকদল। তাঁদের কর্মীদের ভয় দেখানোরও অভিযোগ করছেন সুদাম। সভা করতে গিয়ে আদালতে যাওয়া, মাইক বাজানোর অনুমোদন নিয়ে জটিলতার মতো ‘বাধা’র অভিযোগও করেছেন। বিজেপির এ-ও অভিযোগ, শুভেন্দুর সভা বানচাল করতে প্রশাসনিক স্তরেও অসহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তবে পাশাপাশিই সুদামের দাবি, সেই বাধা পেরিয়ে বিপুল জনসমাগম করার ‘লক্ষ্য’ নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। সুদামের কথায়, “শুভেন্দুর সভা ঘিরে কোনও বাধাই ধোপে টিকবে না। যত বাধা আসবে, ততই আমরা এগিয়ে যাব।” তাঁর সংযোজন, “আমাদের টার্গেট ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক জমায়েত করা। তবে তার থেকে অনেক বেশি মানুষ আসার সম্ভাবনা আছে।”
যে কোনও সভার আগে রাজনৈতিক দলগুলি জমায়েতের একটি ‘লক্ষ্যমাত্রা’ নেয়। বেশির ভাগ সময় সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম মানুষই জড়ো হন। সেখানে আগে থেকেই লক্ষ্যমাত্রা ‘কম’ রেখেছে পদ্ম শিবির। এ নিয়ে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণ মাইতির কটাক্ষ, “যে মাঠে বিজেপি সভা করছে, সে মাঠে ঠাসাঠাসি করেও ১০ হাজারের বেশি জমায়েত করা যাবে না। তা ছাড়া, শুভেন্দু অধিকারীর সভা সফল করতে অন্য জেলা থেকে লোক আনতে হচ্ছে বিজেপিকে। পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি জেলার লোক আসবে কাঁথির সভায়। কিন্তু স্থানীয়রা কোথায়?’’ তরুণের মন্তব্য, ‘‘অভিষেকের সভায় যে রকম লোক হয়েছিল তার সঙ্গে বিজেপির সভার কোনও তুলনাই হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy