দলের জেলা কার্যালয়ে দুই নেতার মারামারি এবং তাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমারের পরে বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস মিশ্রের দাবি ছিল, ‘‘সামান্য ঘটনা। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় খানিক হয়েছে। ওই দাদা-ভাইয়ের মধ্যে যেমনটা হয়!’’ পরে অবশ্য ঘটনার সময়কার ভিডিয়ো ফুটেজ ফাঁস হয়েছে। আর তাতে স্পষ্ট, দুই নেতার মারামারিই হয়েছে।
দলের জেলা কার্যালয়ে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিয়ো ফুটেজ কী ভাবে ফাঁস হল, এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় মেদিনীপুর জেলা বিজেপির অন্দর। সূত্রের খবর, যে বা যাঁরা ওই ফুটেজ ফাঁস করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মারামারির ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? রাজ্য বিজেপির সহ- সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘নিশ্চিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব কিছু খতিয়ে দেখে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’ সূত্রের খবর, ঠিক কী থেকে কী হয়েছিল, সে সব খতিয়ে দেখতে এক বৈঠক হতে পারে। আজ, সোমবারই জেলা কার্যালয়ে এক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, মেদিনীপুরের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ক্ষুব্ধ মেদিনীপুরের সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সহ- সভাপতি দিলীপ ঘোষও। দিলীপরা দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে খোঁজখবরও করেছেন। দলীয় কোন্দলে রাশ টানতে শীঘ্রই মেদিনীপুরে আসতে পারেন দিলীপ। জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করতে পারেন।
শনিবার মেদিনীপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে বচসায় জড়িয়েছিলেন শঙ্কর গুছাইত এবং ঠাকুরদাস মিদ্যা। শঙ্কর দলের জেলা সহ-সভাপতি। ঠাকুরদাস দলের গড়বেতা মধ্য মণ্ডলের সভাপতি। শঙ্কর দলের তরফে গড়বেতা বিধানসভা এলাকার পর্যবেক্ষকও রয়েছে। ফাঁস হওয়া ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কথা কাটাকাটির মাঝে ঠাকুরদাসের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে শঙ্কর ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর ঠাকুরদাসও শঙ্করের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন। শঙ্করকে মারধরও করেন তিনি। মুখে ঘুঁষি মারেন। মারধরে চোখের নীচে আঘাত পেয়েছেন শঙ্কর।
শুক্রবার মেদিনীপুরে দলের এক বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে ছিলেন সাংসদ তথা দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁকে গড়বেতায় ঢুকতে দেওয়া হয় না— এই মর্মে বৈঠকে নালিশ করতে গিয়েছিলেন শঙ্কর। তখন জ্যোতির্ময় তাঁকে থামিয়ে দেন। অনুমান, ওই বিষয় নিয়েই শনিবার জেলা কার্যালয়ে দু’জনে বচসায় জড়িয়ে থাকতে পারেন। রবিবারও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি শঙ্করের সঙ্গে। মোবাইল বেজে গিয়েছে। ঠাকুরদাসেরও মোবাইল বন্ধই ছিল।
বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত ভোট। প্রস্তুতি সারতে শুরু করেছে গেরুয়া- শিবিরও। সেই সময়ে জেলা কার্যালয়ে দুই নেতার মারামারিতে চরম অস্বস্তি জেলা বিজেপির অন্দরে। ঘটনায় আরও রং লেগেছে। জানা গিয়েছে, রবিবার আক্রান্ত শঙ্করকে ফোন করেছিলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সৌমেন খান। পুরপ্রধান মানছেন, ‘‘শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই ফোন করেছিলাম।’’ সঙ্গে কটাক্ষ, "আসলে মেদিনীপুরে তো এই মারামারির সংস্কৃতি ছিল না!" বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি শমিতের পাল্টা খোঁচা, ‘‘তৃণমূলের সংস্কৃতি তো মানুষ রোজই দেখছেন!’’