—নিজস্ব চিত্র।
খেজুরির বিজেপি নেতা রবীন মান্নার গ্রেফতারির প্রতিবাদে পূর্বঘোষণা মতো সোমবার খেজুরিতে ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালন করছে বিজেপি। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধের জেরে কার্যত বিপর্যস্ত জনজীবন। বন্ধ তুলতে গেলে পুলিশের উপরেও চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’র বিরুদ্ধেই এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি, গায়ের জোরে বন্ধ পালন করছে বিজেপি। এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ বজায় রাখতেই এই বন্ধ বলে দাবি শাসকদলের।
শনিবার বিকেলে খেজুরির বাঁশগোড়া বাজারে বিজেপির কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে দলের মণ্ডল সম্পাদক রবীনকে গ্রেফতার করে খেজুরি থানার পুলিশ। অভিযোগ, সাদা পোশাকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সভাশেষে দলের নেতার গ্রেফতারির খবর শুনে খেজুরি থানা এবং হেঁড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রে যান স্থানীয় বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক এবং বিজেপির একাধিক নেতা। যদিও দু’টি থানাতেই ধৃতের কোনও সন্ধান জানা যায়নি। এর পর জানা যায়, রবীনকে মারিশদা থানায় রাখা হয়েছে। শনিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ মারিশদা থানায় যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সরাসরি থানার ভিতরে ঢুকে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের কাছে ধৃত দলীয় কর্মীর অ্যারেস্ট মেমো দেখতে চান।
ধৃতের পরিবারকে কেন দীর্ঘ ক্ষণ বাদেও গ্রেফতারের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা। তিনি প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে থানার বাইরে দলের দুই বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান করেন। থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রীতিমতো হুমকির সুরে পুলিশ আধিকারিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমার দলের নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার স্ত্রীকে দিয়ে মামলা করাব। মারিশদা থানার ডিউটি অফিসার এবং ওসি, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আর তদন্তকারী আধিকারিককে পার্টি করব। প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করব।’’ সেই রাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু সোমবার খেজুরিতে হরতালের ঘোষণা করেন।
সেই মতোই সোমবার সকাল ৬টা থেকে খেজুরির প্রবেশপথ হেঁড়িয়া থেকে জনকাগামী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, কোথাও আবার বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল অবরুদ্ধ করে দেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সকালে বাজারহাট খোলা হলেও বিজেপি কর্মীরা মিছিল করে সেগুলি বন্ধ করে দেন। অবরোধের জেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে পণ্যবোঝাই একাধিক গাড়ি। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষেরাও। তবে বিজেপির দাবি, বিরোধী দলনেতার নির্দেশ মতো অ্যাম্বুল্যান্স-সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়িকে কোথাও আটকানো হচ্ছে না।
খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক বলেন, ‘‘খেজুরি জুড়ে অপশাসন চালাচ্ছে পুলিশ। তৃণমূলের মদতে একের পর এক মিথ্যে মামলায় বিজেপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাঁশগোড়া থেকে রবীন মান্না, নীচকসবা থেকে তিন জনকে এ ভাবেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা সম্মিলিত ভাবে বন্ধ সমর্থন করেছি। মাত্র এক দিনের নোটিসে বনধ ঘিরে এমন সাফল্য নজিরবিহীন। খেজুরি দেখিয়ে দেবে, কী ভাবে আন্দোলন করতে হয়।’’
রবিবার জানা গিয়েছে, কী কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে রবীনকে। গত ২৩ নভেম্বর তৃণমূলের প্রচার গাড়ি আটকে শাসকদলের নেতা দেবাশিস পণ্ডাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাশিসকে খুনের চেষ্টার মামলায় রবীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার রবীনকে কাঁথি মহকুমার বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়। উভয় পক্ষের শুনানির শেষে ধৃত বিজেপি নেতাকে আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন কাঁথি মহকুমা আদালতের দ্বিতীয় কোর্টের ফার্স্ট ক্লাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অতীন মল্লিক। বিজেপির দাবি, নথিপত্র ছাড়াই রবীনকে মারিশদা থানা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কাঁথি আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। পরে তাঁকে পেশ করা হয় কাঁথি মহকুমার বিশেষ আদালতে। বিজেপির দাবি, মণ্ডল সম্পাদককে আদালতে তোলার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি। এ সব কিছুর প্রতিবাদেই সোমবার খেজুরিতে বন্ধ সফল করতে তৎপর ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির ডাকা বন্ধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ করতে ময়দানে নেমেছিল শাসকদল। খেজুরির দু’টি ব্লকে যাতে দোকানপাট, বাজার সব কিছুই খোলা থাকে, তার জন্য প্রচারও চালায় তারা। সোমবার তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীযূষকান্তি পণ্ডা দাবি করেন, ‘‘বিজেপির খেজুরি বন্ধ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সাধারণ মানুষ এই বন্ধ সংস্কৃতির বিরোধী বুঝেই আজ গায়ের জোরে মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত করতে নেমেছে বিজেপি। তবে এই বনধ প্রত্যাখ্যান করেছেন মানুষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy