তিন রাজ্যে বিজেপির জয়ে কাঁথি শহরে বিজেপি কর্মীদের উল্লাস ও লাড্ডু বিতরণ। ছবি শুভেন্দু কামিলা
বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। তার আগে চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জয়জয়কার বিজেপির। মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীশগঢ়ে বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাঙ্গা বঙ্গ বিজেপি শিবির। উচ্ছ্বসিত 'শুভেন্দু তালুক' হিসাবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরের দলীয় নেতা-কর্মীরাও।
রবিবার সকালে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয় কাঁথিতে। সেখানে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্তব্য করেন, "সবে তো ঝড় শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটে মোদী সুনামি দেখবে দেশ। বাংলাতেও এই মোদী সুনামির প্রভাব পড়বে।’’ সেই সঙ্গে জুড়ে দেন, "আগামী লোকসভা ভোটে বাংলায় মোদীজি যা জনাদেশ পেতে চলেছেন তাতে ২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূল ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তার আগেই মমতা সরকারের হারের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
রবিবার চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল অনেকটাই স্পষ্ট হতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। বৈঠক থেকে একে একে বিজেপি বিধায়কেরাও মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বেরিয়েছেন। এ দিনের ফলাফল গোটা রাজ্যে তো বটেই সেইসঙ্গে শুভেন্দুর নিজের জেলাতে বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছে। এতে দলের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া গোষ্ঠী কোন্দল সামলানো নেতাদের পক্ষে সহজ হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। বেশ কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে বিজেপি।
ভগবানপুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলছেন,"এটা প্রত্যাশিত ফলাফল। সাংগঠনিক সমীক্ষায় ওই সব রাজ্যে আমরাই যে ক্ষমতায় আসতে চলেছি, তা আগাম জানা ছিল। তবে গোটা দেশে একের পর এক রাজ্যের মানুষ যে ভাবে মোদীজির নেতৃত্বে সুশাসনের প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন, তাতে বাংলার মানুষ উজ্জীবিত। আগামী লোকসভা ভোটে কাঁথি এবং তমলুকে রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে আমরা জিতব।’’
প্রাক্তন বিধায়ক ও জেলা বিজেপি নেত্রী বনশ্রী মাইতির বক্তব্য, "বাংলায় গেরুয়া ঝড় আসার অপেক্ষায়।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলছেন,‘‘তিন রাজ্যে বিপুল ভোট পাওয়ার পর বিজেপি কর্মীরা প্রবল উচ্ছসিত। প্রতিটি মণ্ডলে লাড্ডু বিতরণ হচ্ছে, মিছিল হচ্ছে।’’ কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তথা বিধায়ক অরূপ দাসের কথায়, ‘‘সংবাদ মাধ্যমের একাংশ এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। কিন্তু আজ শুধু আমাদের দলের কর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষও বুঝতে পেরেছেন মোদীজির বিকল্প হয় না। সুশাসনের স্বাদ পেতে এখানেও সকলেই তৈরি।’’
শুধু শুভেন্দুর খাস তালুক কাঁথি নয়, তাঁর নির্বাচনী এলাকা নন্দীগ্রামেও সারা দিন উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বিজেপি কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, "সকাল থেকেই দলের সকলে আনন্দে মেতে উঠেছেন। এ রাজ্য আমরা পঞ্চায়েত ভোটে অনেক জায়গায় ভাল ফলাফল করেছি। আমরা চাই সেই সব জায়গায় কেন্দ্রীয় সরকারের পরিষেবাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এ বার কর্মীরাও নতুন উদ্যমে সেই কাজে মন দেবেন।’’
প্রসঙ্গত, এ বার ছত্তীশগঢ়ে বিধানসভা ভোটে বাঙালি অধ্যুষিত রায়পুর এলাকায় ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানে সব আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ওখানে ১০ লক্ষ বাঙালি ভোটার আছে। ৯০ শতাংশের বেশি বাঙালি ভোট দিয়েছে। রায়পুরের সব আসনে আমরা জিতেছি। উদ্বাস্তু এলাকাতেও বিজেপি সব বুথে লিড ধরে রেখেছে। ত্রিপুরায় যেমন বাঙালিরা এগিয়ে এসে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিক একই ভাবে ছত্তীসগঢ়ে বাঙালি-আদিবাসি-ওবিসি সমাজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জয় এনে দিয়েছে।’’ পরে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘‘এখানেও পিসি তৃণমূল বা ভাইপো তৃণমূল, কোনওটাই টিকবে না। লোকসভা ভোটে মানুষ এ রাজ্যে মোদীজিকেই দু’ হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন।"
যদিও প্রকাশ্যে বিজেপির এই জয় নিয়ে যথাসম্ভব নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করেছেন শাসক দল তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পীযূষ কান্তি পন্ডা বলছেন,"আজকের ভোটের ফলাফলের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে গোটা দেশে লড়াইয়ে একমাত্র মুখ হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয় তা তৃণমূল জানে। তেলেঙ্গানার মতো এখানেও বিজেপির ঝুলি শূন্যই থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy