দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি বাপুর খালের। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
ছাই-জঞ্জালে বদ্ধ নিকাশি নালা।
মেচেদা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রূপনারায়ণ নদী। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে মেচেদা-বাপুর খাল। তা সত্ত্বেও একটু ভারী বৃষ্টি হলেই জলে ভাসে শহর। রাস্তার ধারের বাড়ি ও দোকানেও জল ঢুকে যায়। ক্ষতির মধ্যে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
মেচেদা রেল স্টেশনের কাছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার পর থেকেই গুরুত্ব বাড়তে থাকে মেচেদার। তারপর থেকেই আড়ে বহরে বেড়েছে শহর। বর্তমানে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে শান্তিপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার অর্ন্তভুক্ত মেচেদা শহরের অধিকাংশ এলাকা। কাছের কোলাঘাট শহর ও মেচেদা শহরকে নিয়ে কোলাঘাট-মেচেদা পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াও চলছে। তবে শহরের নাগরিক পরিষেবার হাল কবে ফিরবে, জানতে চায় শহরবাসী।
মেচেদা শহরে বর্ষায় জল নিকাশির প্রধান ভরসা মেচেদা-বাপুর খাল। মেচেদা বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়া ওই নিকাশি খাল শান্তিপুর গ্রামের কাছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দক্ষিণ দিক দিয়ে বাপুর এলাকায় রূপনারায়ণ নদীতে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খালের দু’কিলোমিটার অংশ রয়েছে মেচেদা শহর এলাকায়। তবে নিকাশি তো দূর, জঞ্জাল-প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ খালগুলি থেকে বর্ষাকালে নোংরা জল উপচে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেচেদা ও সংলগ্ন এলাকার অধিকাংশ নিচু জমি ভরাট করার জন্য এক সময় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ছাই ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে এলাকার বর্ষার সময় শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাই মিশ্রিত জল এসে খালে পড়ে। ক্রমাগত ছাই জমা হয়ে মজে গিয়েছে খাল। একইসঙ্গে নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় জঞ্জালেও অবরুদ্ধ খাল। মাঝে-মধ্যে খাল সংস্কার করা হলেও তাতে কোনও সুরাহা হয় না। ফলে বর্ষায় বৃষ্টিতে মেচেদার পুরাতন বাজার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
মেচেদা পুরাতন বাজার কমিটির সদস্য স্বপন কুইলা বলেন, ‘‘মেচেদা-বাপুর নিকাশি খালের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তার জমা জল দোকানে ঢুকে যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বর্ষায় বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ দিন দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়। এই সমস্যার বিষয়ে এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’
মেচেদা-বাপুর খাল ছাড়াও মেচেদা বাজারের প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে মেদিনীপুর খাল ও দেনান খাল। শহরে এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘এক সময় বাপুর খাল ও মেদিনীপুর খাল দিয়ে কোলাঘাট বাজার থেকে রূপনারায়ণ নদী পথ হয়ে মেচেদা পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করত। বর্তমানে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইমিশ্রিত জল পড়ে মেদিনীপুর খাল বুঝে যাচ্ছে।’’
মেচেদা উন্নয়ন কমিটির সদস্য চিকিৎসক বিশ্বনাথ পড়িয়ার দাবি, ‘‘মেচেদা বাজার-সহ শহর এলাকায় উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে শহরে নিকাশি সমস্যা আরও তীব্র হবে।’’ এ বিষয়ে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তনুশ্রী জানা জানান, মেচেদার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকায় মেচেদা-বাপুর খালের ২ কিলোমিটার অংশ সংস্কার কাজ চলছে। পাশাপাশি, মেচেদা বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার পথে খালের উপর পুরনো কালভার্টের পরিবর্তে কালভার্টও তৈরি করা হবে।
শুধু নিকাশি নয়, গরম পড়তেই জলের সমস্যায় ভোগেন শহরের বাসিন্দারা। এখনও মেচেদায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ভূ-গর্ভস্থ জলই ভরসা। বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরের গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ছে। মেচেদা ২ নম্বর মিনি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুধাকর সামন্ত জানান, কয়েক বছর আগেও এখানে মাত্র ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইপ দিয়ে নলকূপ বসিয়ে পানীয় জল তোলা যেত। কিন্তু জলস্তর নেমে যাওয়ায় এখন প্রায় ৪৫০-৫০০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ তৈরি করতে হচ্ছে। গরমকালে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৯ সালের ৯ অগস্ট তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁশকুড়া-খড়্গপুর তৃতীয় রেল লাইনের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে এসে মেচেদায় জলাধার-সহ পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন। যদিও সেই ঘোষণা আজও বাস্তবের মুখ দেখেনি।
তাই মেচেদায় নাগরিক পরিষেবার হাল কবে ফিরবে, সে দিকেই তাকিয়ে শহরবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy