পুত্রসন্তান হলে গুনতে হবে দু’শো থেকে চারশো টাকা। কন্যা সন্তান হলে একশো থেকে দেড়শো টাকা। সন্তান প্রসবের পরে প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে প্রথম বার দেখার ‘দাম’ এমনই। আর টাকা না দিলে? লেবার রুম থেকে প্রসূতিকে ওয়ার্ডের শয্যায় নিয়ে যাওয়াই হয় না। এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের লেবার রুমের এক শ্রেণীর মহিলা কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ হেন জুলুমবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি প্রসূতির পরিজনরা হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সন্তানের জন্মের পর অনেক সময়ই পরিবারের লোকেরা হাসপাতালের কর্মীদের হাতে দু’একশো টাকা দেন। সেটা তাঁদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সেই টাকা না দিলে যদি সদ্যোজাতর মুখ দেখতে না দেওয়া হয়, তা হলে তো সেটা জুলুমবাজিরই নামান্তর! হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা জানিয়েছেন, প্রসবের পরে প্রসূতির জামাকাপড় কাচার নামেও টাকা আদায় করা হয়। ট্রলিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যও ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা চার্জ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই ধরনের ২৭টি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে সুপারের কাছে। হাসপাতালে আয়াদের এমন দৌরাত্ম্যের অভিযোগ মাঝে মধ্যে শোনা যায়। কিন্তু এ বার চতুর্থ শ্রেণীর স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে লেবার রুমের আড়ালে এই মৌরসিপাট্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলা কর্মীদের একাংশ। প্রতিদিন হাসপাতালের লেবার রুমে গড়ে ৫০টি সন্তান প্রসব হয়। ফলে, রোজগারটা মন্দ হয় না। সূত্রের খবর, ওই সব কর্মীরা টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন।
ঝাড়গ্রামের জমিদারডাঙা গ্রামের ধানি মাণ্ডি গত শনিবার হাসপাতালে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। এরপরই চারশো টাকা দাবি করেন লেবার রুমের মহিলা কর্মীরা। ধানিদাবী বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। অত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে ছাড় দিতে বলেছিলেন আমার শাশুড়ি। তা-ও জোর করে শাশুড়ির কাছ থেকে দু’শো টাকা নিয়েছেন।” হাসপাতাল থেকে সোমবার সদ্য ছাড়া পেয়েছেন বেলপাহাড়ির ওদলচুয়ার দুলালি টুডু। তাঁর দু’টি যমজ ছেলে হয়েছে। দুলালির বৌদি বুধুরানি মাণ্ডি বলেন, “ননদের যমজ ছেলে হয়েছে বলে, কর্মীরা দ্বিগুণ টাকা চেয়েছিল। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। কোথা থেকে টাকা দেব!’’ প্রসূতিদের পরিজন নমিতা খামরি, অতুলমণি বেসরাদের বক্তব্য, “আমাদের মতো গরিব মানুষদের জন্য সরকারি হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু সেখানেই যদি এমন জুলুমবাজি হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব?”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগেও প্রসবের পরেে টাকা চেয়ে জুলুমবাজির অভিযোগ উঠেছিল। ২০১২ সালে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পরে এই জুলুমবাজি আটকাতে প্রসূতি কক্ষের বাইরে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছিল কেউ যেন কর্মীদের টাকা না দেন। কিন্তু তত্কালীন সুপারের জারি করা সেই নোটিসই পরে উধাও হয়ে যায়। এরপর প্রসূতি কক্ষের সামনের করিডরে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। কিন্তু লেবার রুমের আড়ালে লেনদেন হওয়ার ফলে, তা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। এ দিন হাসপাতালের লেবার রুমের কর্মীরা অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চান নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স বলেন, “এটা তো ‘ওপেন সিক্রেট’। আড়ালে এসব হয় বলে শুনেছি। তবে চোখে দেখিনি।”
ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “অভিযোগের তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। তার আগে কিছু বলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy