হাসপাতাল সুপারের কাছে নার্সরা। —ফাইল চিত্র।
শিশু মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগে রবিবারই ধুন্ধুমার বেধেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একদিন যেতে না যেতেই ফের এক নার্সের মৃত্যু ঘিরে শোরগোল বাধল মেডিক্যালে। তৃপ্তি দিণ্ডা (৪০) নামে ওই নার্স মেদিনীপুর মেডিক্যালেই কর্মরত ছিলেন। নার্সদের প্রতিনিধি দল হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজার সঙ্গে দেখা করে অসন্তোষের কথা জানায়। সুপার সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
দিন কয়েক আগে কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সরব হন মৃত নার্সের সহকর্মীরা। মেদিনীপুর মেডিক্যালে কর্মরত নার্সের মৃত্যুতেও মৃতার পরিজনেদের অভিযোগ, হাসপাতালে তৃপ্তিদেবীর চিকিৎসাই হয়নি। চিকিৎসক এমআরআই করানোর কথা জানিয়েছিলেন। সোমবার এমআরআই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
গত শুক্রবারও কাজে যোগ দিয়েছিলেন তৃপ্তিদেবী। তিনি এসএনসিইউ- তে কাজ করতেন। ওই দিন হাসপাতালেই অসুস্থ বোধ করেন তিনি। পরিজনেরা এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। বাড়ি ফেরার পর অসুস্থতা বাড়ে। বমি ও মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। পরে পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে যন্ত্রণা শুরু হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে গত শনিবার তৃপ্তিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিজনেরা। তৃপ্তিদেবীর স্বামী সৌমেন দিণ্ডার কথায়, “হাসপাতালে ভর্তির পর তেমন কোনও চিকিৎসাই হয়নি। ঠিক কী হয়েছে তাই জানাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। শারীরিক অবস্থা খারাপই হচ্ছিল।” তাঁর কথায়, “অন্য কোথাও রেফারও করা হয়নি।” সৌমেনবাবুর বক্তব্য, “সোমবার এমআরআই করানোর কথা ছিল। আমরা এমআরআই করানোর জন্য গিয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়, আজ এমআরআই হবে না। কেন হবে না তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি।” মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় বাড়ি মেদিনীপুর শহরের পালবাড়ির বাসিন্দা ওই নার্সের।
চিকিৎসক বলার পরেও কেন চিকিৎসাধীন ওই নার্সের এমআরআই হল না? মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর জবাব, “বিষয়টি দেখছি।” হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “এ ক্ষেত্রে এমআরআই রিপোর্ট খুব জরুরি ছিল না। কিন্তু কেন হাসপাতালে এমআরআই করা হল না সেটাই প্রশ্ন।” মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের নার্সিং সুপার বীথিকা গুহর কাছে যান নার্সরা। নার্সের মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চাননবাবু। তিনি বলেন, “সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্ত কমিটি হবে। কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখবে।” পঞ্চাননবাবু বলেন, “হাসপাতালে পিপিপি মডেলের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমআরআই হয়। এ ক্ষেত্রে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রায়ই চিকিৎসা পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। সপ্তাহ কয়েক আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে এক নার্সকে সাসপেন্ড করা হয়। ক্ষুব্ধ নার্সদের প্রশ্ন, এ বার কে সাসপেন্ড হবেন। মেডিক্যালের নার্সিং সুপার বীথিকা গুহও বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল। এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা হয়নি।” কেন সোমবার তৃপ্তিদেবীর এমআরআই হল না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনিও। তৃপ্তিদেবীর দুই মেয়ে। হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল সৌমেনবাবুর। তাঁর কথায়, “এ ভাবে ওকে হারাতে হবে ভাবিনি। ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে এমনটা হত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy