দোকানে চপ ভাজতে ব্যস্ত কারিগর। নিজস্ব চিত্র
পাঁশকুড়ার চপের সুনাম গোটা রাজ্য জুড়ে। সময়ের হাত ধরে পরিবর্তন এসেছে তার স্বাদ, আকার এবং দামেও। কিন্তু তার আঁচ পড়েনি পাঁশকুড়ার কেশাপাট বাজারে ‘ঝণ্টুদা’র চপের দোকানে। স্বাদে তো বটেই, দামের পরিবর্তনের ছোঁয়া থেকেও নিজেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে চলেছে ‘ঝণ্টুদা’র চপ।
বাজারে যখন আর পাঁচটা দোকানে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকায় চপ বিকোয়, ‘ঝণ্টুদা’র দোকানে তখনও তা মিলছে মাত্র দেড় টাকায়। তাও এক বছর আগে মাত্র ৫০ পয়সা দাম বাড়ার পরে। চপের পাশাপাশি পেঁয়াজি মেলে ১ টাকায় পাঁচটা। সকাল হোক বা সন্ধ্যে, কেশাপাটের ‘ঝণ্টুদা’র দোকানে চপ আর পেঁয়াজি কিনতে রীতিমতো লাইন পড়ে খদ্দেরদের। দোকানের একমাত্র কারিগর বৃন্দাবনচকের বাসিন্দা স্বপন মাল। জানালেন, প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চপ আর পেঁয়াজি ভেজে আসছেন এখানে। সময় বদলালেও স্বাদে বদল হতে দেননি চপ, পেঁয়াজির।
হাতিশাল গ্রামের বাসিন্দা সুনীল কুমার মাইতি ওরফে ‘ঝণ্টুদা’ মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। এখন দোকান চালান তাঁর ছেলে বিপ্লব মাইতি। দুর্মূল্যের বাজারেও এত সস্তায় বিক্রি করেন কী করে ?
বিপ্লববাবুর কথায়, ‘‘বাবা বলতেন, সংসার চলে যাওয়ার মতো টাকা হলেই চলবে। বেশি নিয়ে কী করব? বাবা স্বল্প লাভে ব্যবসা করতেন। সেই সুনাম ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’’ কারিগর স্বপনবাবু বলেন, ‘‘৫০ বছর ধরে দোকান মালিক ও খদ্দেরদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই এখান থেকে আর কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না।’’
চপের দোকান চালিয়ে একমাত্র ছেলে শুভজিতকে পড়াশোনা করিয়েছেন বিপ্লববাবু। তিনি এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়েও দিয়েছেন এই দোকান চালিয়েই। বিপ্লববাবু জানান, দিনে গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকার চপ, পেঁয়াজি বিক্রি হয়। এর উপর উৎসব অনুষ্ঠানে এতটাই চাহিদা থাকে যে তখন দোকানে অতিরিক্ত কারিগরের ব্যবস্থা করতে হয়। চপ, পেঁয়াজির পাশাপাশি চাহিদা মেনে চা, রুটির ব্যবস্থাও রেখেছেন বিপ্লববাবু ।
পাঁশকুড়ার শিক্ষক রূপেশ সামন্ত বলেন, ‘‘এই যুগে দেড় টাকায় চপ ভাবা যায়! এই দোকানের চপ আর পেঁয়াজির স্বাদও বেশ ভাল। কেশাপাট এসে কেউ ‘ঝণ্টুদা’র দোকানের চপ, পেঁয়াজি না কিনে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন এমন লোক পাওয়া দুষ্কর।’’
পাঁশকুড়ার চপ বিখ্যাত। কিন্তু তার পরেও আপনার দোকানের এত জনপ্রিয়তার কারণ কী? প্রশ্নটা শুনেই মুচকি হেসে দোকানের ভিতরে ঢুকে গেলেন বিপ্লববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy