মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের মোমবাতি মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
এ যেন আঁধার থেকে আলোয় ফেরার কাহিনি।
নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। ধাক্কা খেয়েছিল ভাবমূর্তিও। সেই মামলা বিচারাধীন হলেও আর জি করের ঘটনার পরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। প্রতিবাদে সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। মিছিল, বক্তৃতা দেওয়া, স্লোগান লেখা থেকে দেওয়া, ফ্লেক্স-প্ল্যাকার্ড গুটিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। এই আবহে অনেকটাই ব্যতিক্রমী এবারের শিক্ষক দিবস।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মেদিনীপুরে অনেক শিক্ষক পথে নেমেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) এক সময়ে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিলেন, স্কুল পড়ুয়ারা স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্মসূচি ছাড়া আর অন্য কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবে না। তারপরে গর্জে ওঠে মেদিনীপুরের শিক্ষক-সমাজ। পরে অবশ্য তাঁর জারি করা ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেন। মেদিনীপুরের এক শিক্ষক বলছেন, "আর জি করের ঘটনায় দেশ-বিদেশের মানুষ দোষীর শাস্তির দাবিতে রাজপথে মিছিল করেছেন। বিচারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবেই।" গোয়ালতোড়ের এক শিক্ষিকার কথায়, "ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষক সমাজ অগ্রণি ভূমিকা। এই সময়ে নিশ্চুপ থাকা মানে, অন্যায়কারীদের সমর্থন দেওয়া।"
খড়গপুর শহরে ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনের পড়ুয়ার শিক্ষকদের সঙ্গে পথে নেমে বিচার চেয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, "শিক্ষকেরা সমাজের মেরুদন্ড। রাজ্যের এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা পথে নামবে না সেটা হতে পারে না। সমাজ সংস্কারের মানসিকতা নিয়ে মানবতার তাগিদে আমরা পথে রয়েছি।" তিনি জুড়েছেন, ‘‘আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন শিক্ষক যাঁদের নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে আছে, তাঁরাও পথে নেমেছেন। হতে পারে বেশ কয়েক বছর শিক্ষক হিসেবে কাজ করে তাদের মেরুদন্ডটাও সোজা হয়ে গিয়েছে।" নারায়ণগড়ের শশিন্দা সাগরচন্দ্র বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর তেওয়ারি বলেন, "আমরা যে যা পেশায় থাকি না কেন, সবার আগে আমরা নাগরিক।"
ঘাটাল মহকুমাতেও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির পক্ষে চন্দন ভট্টাচার্য বলছিলেন, "এসএসসি দুর্নীতির কারণে শিক্ষক সমাজের প্রতি আমজনতার একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সেটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমরাও চেষ্টা করব, শিক্ষক সমাজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও ভরসার সম্মান রাখা।" তৃণমূলের শিক্ষক নেতা সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, "শিক্ষক সমাজ বরাবরই আন্দোলনের মুখ। প্রতিবাদী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব ক্ষেত্রেই তাঁরা আগে রুখে দাঁড়ান। এ ক্ষেত্রেও শিক্ষক সমাজ এগিয়ে এসেছেন।"
প্রতিবাদের সুর চড়া জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামেও। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা একটি প্রাথমিক স্কুলের তরুণ শিক্ষক সুদীপ্ত নায়েক বলছেন, ‘‘যোগ্য-অযোগ্য সবাইকেই একই সারিতে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর জি কর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সেটা অন্তত ঘুচেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দোষীদের শাস্তির দাবিতে সম্মিলিত প্রতিবাদের অন্যতম স্বর আমরা প্রত্যেকেই। আমি যে স্কুলের প্রাক্তনী সেই স্কুলের প্রাক্তনীদের প্রতিবাদ মিছিলেও পা মিলিয়েছি।’’ জামবনির গিধনি এলোকেশী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সম্প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, স্কুল অনুমতি না দিলে তাঁরা নিজ দায়িত্বে প্রতিবাদ মিছিল করবে। স্কুল ছুটির পর পড়ুয়ারা মিছিলও করে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পড়ুয়াদের মিছিলে হেঁটেছেন। জামবনির ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দেবলীনা দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের সুরক্ষা ও শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই মিছিলের পিছনে শিক্ষক শিক্ষিকারাও ছিলেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সত্য প্রকাশের দাবিতে ও ন্যায় বিচারের আশায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আমার মত অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও থাকছেন।’’ বিনপুরের আউলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা কর বলছেন, ‘‘আমিও রাত দখলের কর্মসূচি ও ঝাড়গ্রামে মহামিছিলে যোগ দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy