ফাইল চিত্র।
ওদের নামের পাশে ‘লাল দাগ’ রয়েছে। সকলেই শিশু। কারও বয়স দুই কিংবা তিন। কেউ বা এক বছরের। সরকারি খাতায় ওদের নামের পাশে ‘লাল দাগ’ পড়েছে কারণ সকলেই অপুষ্টিতে ভুগছে।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে ওজনের পরিমাণ হ্রাস পেলে তাকে প্রাথমিকভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪০,৪৪০ জন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যায়। এরমধ্যে মারাত্মক অপুষ্টির শিকার ৭২৭ জন শিশু। বাকিদের মাঝারি মাত্রায় অপুষ্টি রয়েছে। জন্মের সময়ে শিশুর ওজন আড়াই কেজি হলে তাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। তার থেকে কম ওজন হলে তাকে অপুষ্ট শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।
গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়ার পরে মহিলাদের পুষ্টিকর আহার খুবই জরুরি। তাঁদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রচারও চালাচ্ছে প্রশাসন। অপুষ্ট শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ময়দা, ছোলা, বাদাম ও চিনির মিশ্রণে তৈরি পুষ্টিকর লাড্ডু চালু করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলিতে শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওজনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেও অপুষ্টি বাড়ছে কেন? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে স্থায়ী কর্মী বা সহায়িকা নেই। তাই নজরদারিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এক সহায়িকার কথায়, ‘‘শুধু বাড়তি ডিম এবং ছাতু দিয়ে এই সমস্যা সার্বিকভাবে দূর করা মুশকিল।’’ মেদিনীপুর গ্রামীণের বাসিন্দা এক অপুষ্ট শিশুর মায়ের আক্ষেপ, ‘‘যা রোজগার করি তাতে সপ্তাহে একদিনও মাছ জোটে না। তাই ছেলেকে পুষ্টিকর খাবার দিতে পারি না।’’
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের একাংশ জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর অপুষ্টির অন্যতম কারণ মায়েদের সচেতনতার অভাব। অনেক মহিলা শিশুর খাবার বাড়ি নিয়ে চলে যান। তিনি সন্তানকে সেই খাবার খাওয়ালেন কি না তা জানার উপায় থাকে না। সময়ের আগেই প্রসব, গর্ভবতী থাকাকালীন নানা অনিয়মের কারণেও অপুষ্ট শিশু জন্মায়। তবে এখন শিশুকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রেও পাঠানো হয়। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বর্তমানে বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের কাজ ভালভাবে হচ্ছে না। তাই অনেকে অপুষ্টিতে ভুগছে।’’
জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের কাজ ভাল ভাবেই চলছে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারও দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, ‘‘আগে অপুষ্টির হার আরও বেশি ছিল। গত কয়েক বছরে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। অনেক অপুষ্ট শিশুর স্বাস্থ্যও ফিরেছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, মারাত্মক অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। আশা করা যায়, আগামী মার্চের মধ্যে সংখ্যাটা ৬০০- এ নেমে যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমেছে। আরও কমানোর চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy