—প্রতীকী চিত্র।
একসময় এখানকার বালি শাসকদলের কাছে বালি হয়ে উঠেছিল 'চোখের বালি'। সেই গড়বেতাতেই এখন বালির আকাল! প্রশাসন সূত্রে সে রকমই খবর। গড়বেতা ১ ব্লকে এখন একটিও বৈধ বালি খাদান চালু নেই। ফলে বালির জোগান নেই গড়বেতায়। এতেই আতান্তরে পড়ছেন 'বাংলার বাড়ি' প্রকল্পের উপভোক্তারা।
জানা গিয়েছে, বালির অভাবে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও কেউ বাড়ি শুরু করতে পারছেন না, কেউ আবার বাড়তি কড়ি গুনে পাশের ব্লক কিংবা জেলা থেকে বালি আনছেন। পরিস্থিতি আঁচ করে বালির সংস্থান করতে উদ্যোগী হয়েছে গড়বেতা ১ ব্লক প্রশাসন। জানা গিয়েছে, বালির জন্য ব্লক প্রশাসন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন থেকে খাদান খোলার বিষয়ে কোনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর।
একসময় গড়বেতা ছিল বালির ‘সাম্রাজ্য’। বালি কারবারিদের দৌরাত্ম্য়ে ঘুম উড়েছিল প্রশাসনের। বালি ক্ষোভে মাঝে মধ্যেই তেতে উঠত গড়বেতা। শিলাবতী নদী ও কেঠিয়া খালে ছিল অনেক গুলি বালি খাদান। বৈধ খাদানের পাশাপাশি নজর এড়িয়ে চলত অবৈধ খাদান থেকে বালি তোলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও একবার উঠে এসেছিল গড়বেতার বালি কারবারের প্রসঙ্গ। সে সব এখন অতীত। রাজ্য সরকারের বালি নীতিতে প্রশাসনিক কড়াকড়িতে গড়বেতায় এখন বালি কারবারের রমরমা নেই। গত বছরও যে ৫-৬ টি বৈধ বালি খাদান ছিল, লিজ়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সে গুলিও কয়েকমাস ধরে বন্ধ। খাদান মালিকরা বলছেন, ‘‘নতুন করে আর বালি ঘাট টেন্ডার না হওয়ায়, খাদান খোলা যাচ্ছে না।’’
একটিও খাদান চালু না থাকায় গড়বেতা ১ ব্লকে দেখা দিয়েছে বালির আকাল। যারপরনাই অসুবিধায় পড়েছেন ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের উপভোক্তারা। স্থানীয় ভাবে বালি না পেয়ে অনেকে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও বাড়ির কাজ শুরু করতে পারছেন না। অনেকে পাশের ব্লক গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা, কিংবা পাশের জেলা বাঁকুড়া থেকে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে বালি এনে বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। আমকোপা অঞ্চলের ফতেসিংহপুর গ্রামের এক উপভোক্তা বললেন, ‘‘প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা আসায় বাড়ি করব বলে মাটির বাড়ির একাংশ ভাঙি। এখন শুনছি বালিই পাওয়া যাচ্ছে না। বালি না পেলে বাড়ি করব কী ভাবে!" সন্ধিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পাকা বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন ৫৪৬ জন। তার মধ্যে অনেকে বালির অভাবে বাড়ির কাজ শুরু করতে পারেননি। এই অঞ্চলের বাছুয়া, ভগবন্তপুর, সন্ধিপুর, কাতরাবালি গ্রামের কিছু উপভোক্তা বাঁকুড়া জেলার জয়পুর ব্লক থেকে বালি আনছেন অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে। একজন উপভোক্তা বলেন, ‘‘জয়পুর থেকে ট্রাক্টরে করে বালি এনে বাড়ির কাজ শুরু করেছি। দূর থেকে আনতে হচ্ছে বলে গাড়ি ভাড়াও বেশি লাগছে। এক ট্রাক্টর বালির দাম পড়ছে ৫৫০০ টাকা।’’ সন্ধিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আশরাফ গায়েন বলেন, ‘‘বালির অভাবে আবাসের উপভোক্তারা অসুবিধায় পড়ছেন। বহু দূর থেকে বেশি টাকা দিয়ে বালি আনছেন তাঁরা।’’ আগরা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আজিম চৌধুরী বালির আকালের কথা। তিনি বলেন, ‘‘বালিই পাওয়া যাচ্ছে না, এদিক ওদিক করে বালি জোগাড় করে আবাসের বাড়ি শুরু করছেন কেউ কেউ।’’
পরিস্থিতি আঁচ করে বালি নিয়ে গড়বেতা ১ ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গড়বেতা ১ ব্লকে একটিও বৈধ বালি খাদান চালু নেই। অন্তত ১-২ টি খাদান খোলা হলেও বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাদের বালি পেতে সুবিধা হত। বিষয়টি জেলাতে জানানো হয়েছে।’’
ব্লকের ভূমি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৈধ বালি খাদান চালু নেই। অবৈধ উপায়ে বালি তোলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল বাজপেয়ী বলেন, ‘‘বালির জোগান স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ঘাট চিহ্নিত করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy