খড়্গপুর আইআইটিতে ‘অ্যাকাদেমিয়া ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বের চাকরির বাজারে চলছে মন্দা। নিয়োগ বন্ধ করেছে বিভিন্ন সংস্থা। আইআইটি দিল্লির এক পড়ুয়াকে ১ কোটি ৬০ লক্ষের চাকরি দিয়েও তা প্রত্যাহার করেছে একটি খাবার ডেলিভারি সংস্থা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এই প্রথমবার ‘অ্যাকাদেমিয়া ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’(এআইসি) আয়োজন করেছিল খড়্গপুর আইআইটি। সেখানে একদিনেই ৭৭১টির বেশি চাকরির নিয়োগপত্র মিলেছে। প্রথমদিনেই বার্ষিক ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বেতনের চাকরি পেয়েছেন দুই পড়ুয়া। যদিও সার্বিক ভাবে এবারের ক্যাম্পাসিং নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন খড়্গপুর আইআইটির অনেক পড়ুয়া।
শুক্রবার থেকে খড়্গপুর আইআইটিতে ক্যাম্পাসিং শুরু হয়েছে। এ বার প্রথম এই পর্বের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাকাদেমিয়া ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’(এআইসি)। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার গাঁটছড়ায় এমন আয়োজন হওয়ায় এই নাম বাছাই করা হয়েছে। সঙ্গে আগত সংস্থাগুলিকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে জানাতে প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছে খড়্গপুর আইআইটি। শনিবার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় দিন ছিল।
খড়্গপুর আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার প্রথমদিনেই সবমিলিয়ে ৬১টি সংস্থা ১২১টি প্রোফাইলে চাকরির সুযোগ নিয়ে এসেছিল। সেই নিয়োগ পর্বে ১৯ জন পড়ুয়া আন্তর্জাতিক চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্বের চাকরির বাজার মন্দা থাকলেও এ বার এই আইআইটির প্রায় ৪০ জন পড়ুয়া বার্ষিক ৯০ লক্ষ টাকার অধিক বেতনের চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। আর ৬ জন পড়ুয়া পেয়েছেন বার্ষিক ১ কোটি টাকারও বেশি বেতনের চাকরির নিয়োগপত্র। সবচেয়ে নজর কেড়েছে কম্পিউটার সায়েন্স ও গণিত বিভাগ থেকে দুই পড়ুয়াকে একটি ট্রেডিং সংস্থার বার্ষিক১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চাকরির সুযোগ দেওয়ার খবর। যদিও ওই পড়ুয়ারা আপাতত সংস্থার নিয়ম মেনে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চেয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
জানা গিয়েছে, প্রথম দিনে ইন্টার্নশিপে যাওয়া পড়ুয়াদের প্রি-প্লেসমেন্ট অফার-সহ সর্বমোট ৭৭১টি চাকরির নিয়োগপত্র মিলেছে। ওই ৭৭১টি নিয়োগপত্রের মধ্যে প্রি-প্লেসমেন্টে ৪৪১ জন পড়ুয়া আগেই চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। বাকি ৩৩০ জন পড়ুয়া প্রথম দিনের ক্যাম্পাসিংয়ে ওই নিয়োগপত্র পেয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের রাত পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮২৬ জন পড়ুয়া চাকরি পেয়েছেন। কনক্লেভ পরিচালনা করা আইআইটির কেরিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজীব মাইতি বলেন, “এ বার বিশ্বজুড়েই চাকরির বাজার খারাপ। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মূল লক্ষ্য সমস্ত পড়ুয়া যাতে চাকরি পান। আমার মনে হচ্ছে আমাদের আইআইটিতে প্রথমদিনেই যে চাকরির সুযোগ পড়ুয়ারা পেয়েছেন সেটা সন্তোষজনক। গতবার প্রি-প্লেসমেন্ট বেশি থাকা সত্ত্বেও প্রথমদিনে ৭৬০ জন পড়ুয়া চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। এ বার প্রি-প্লেসমেন্ট কম সত্ত্বেও এই সংখ্যা বেড়েছে।”
তবে ক্যাম্পাসিংয়ে অংশগ্রহণকারী আইআইটির পড়ুয়ারা এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কারণ অনেক বড় সংস্থা এবার ক্যাম্পাসিংয়ে আসেনি। আবার যে বড় সংস্থাগুলি এসেছে তারা কম সংখ্যক সুযোগ নিয়ে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, আইআইটি পড়ুয়ারা বিশ্বখ্যাত ট্রেডিং সংস্থাগুলিতে চাকরি পাওয়ার সুযোগের আশায় থাকেন। কারণ এই ট্রেডিং সংস্থাগুলিই সর্বোচ্চ মূল্যের চাকরির সুযোগ নিয়ে আসে। এ বার তেমন ট্রেডিং সংস্থা কম এসেছে। পড়ুয়াদের দাবি, একটি বড় ট্রেডিং সংস্থা এসে সফটওয়্যার প্রোফাইলে চাকরি দেওয়ার কথা বলেও পরে সফটওয়্যারে নিয়োগ না করেই ফিরে গিয়েছে।
কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া সৌভিক রাণা বলেন, “বিশ্বে চাকরির বাজার ভাল নয়। তার মধ্যে আমাদের আইআইটিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে এটাই আশার কথা। তবে এ বার সংস্থাগুলির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারিনি আমরা। বড় ট্রেডিং সংস্থাগুলি সফটওয়্যার থেকে যেভাবে অন্যবার নিয়োগ করে তা এ বার হচ্ছে না। তবে তার মাঝেও আমি চাকরি পেয়েছি এটাই বড় প্রাপ্তি।” অনেক পড়ুয়া নিজেদের প্রোফাইল ছেড়ে অন্য প্রোফাইলে চাকরির সুযোগ গ্রহণ করেছে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র মনোসিজ সরকারের কথায়, “আমি নিয়োগপত্র পেয়েছি। তবে যতটা ভাল আশা করেছিলাম ততটা ভাল পাইনি। কিন্তু বিশ্বের চাকরির বাজারের দিকে তাকিয়ে চাকরি যে পাচ্ছি এটাই বড় কথা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy