Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

শেষবেলায় তৃণমূলের প্রচারে ভিন্দেশি তারা

শেষলগ্নের ভোট-প্রচারে ঝাঁপাল সবদলই। সোমবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। কাল বুধবার মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে ভোট। তার আগে এই দুই কেন্দ্রে চুটিয়ে প্রচার সারল শাসক-বিরোধীরা। প্রার্থী ‘তারা’। ভোটের শেষ প্রচারেও সেই ‘তারা’দের উপরে ভরসা রাখল তৃণমূল। শাসকদলের হয়ে ভোটপ্রার্থনা করতে এ দিন জেলায় এসেছিলেন একঝাঁক তারকা। কে ছিলেন না ‘তারা’দের তালিকায়? বলিউড অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী থেকে টলিউড অভিনেতা হিরণ।

খড়্গপুরে তৃণমূলের সভায় চিত্রতারকা, ক্রীড়াবিদরা।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুরে তৃণমূলের সভায় চিত্রতারকা, ক্রীড়াবিদরা।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

শেষলগ্নের ভোট-প্রচারে ঝাঁপাল সবদলই। সোমবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। কাল বুধবার মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে ভোট। তার আগে এই দুই কেন্দ্রে চুটিয়ে প্রচার সারল শাসক-বিরোধীরা।

প্রার্থী ‘তারা’। ভোটের শেষ প্রচারেও সেই ‘তারা’দের উপরে ভরসা রাখল তৃণমূল। শাসকদলের হয়ে ভোটপ্রার্থনা করতে এ দিন জেলায় এসেছিলেন একঝাঁক তারকা। কে ছিলেন না ‘তারা’দের তালিকায়? বলিউড অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী থেকে টলিউড অভিনেতা হিরণ। চিমা ওকোরি, ব্যারেটোর মত ফুটবলার। সোমা বিশ্বাস, দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ক্রীড়াবিদ্।

সোমবার সকালে তারকাদের নিয়ে খড়্গপুর শহরের মালঞ্চয় সভা করে তৃণমূল। ছিলেন মন্ত্রী মদন মিত্র, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় প্রমুখ। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায় অবশ্য সভায় ছিলেন না। তবে তিনি বিকেলের রোড-শোয়ে উপস্থিত ছিলেন। শহরের রবীন্দ্রনগর থেকে ‘রোড-শো’ শুরু হয়। পরে তা শহরের বিভিন্ন পাড়ায় পৌঁছায়। সন্ধ্যাদেবীর গাড়িতেই ছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ। স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি ছিলেন মদনবাবুর সঙ্গে। মৃগেনবাবু বলছিলেন, “মেদিনীপুরের মানুষ শান্তির পক্ষে। উন্নয়নের পক্ষে। মানুষ আর হিংসার রাজনীতি চান না। সন্ধ্যাদি এ বার বিপুল ভোটে জিতবেন।” ‘রোড শো’ যখন শেখপুরা পেরিয়ে স্টেশন রোডের দিকে এগোচ্ছে, তখনই কিশোর-কিশোরীদের একটা দল ‘তারা’দের জিপগুলো ঘিরে ধরে। কেউ মহিমা-হিরণের দিকে অটোগ্রাফের খাতা বাড়িয়ে দেন। কেউবা চিমা, ব্যারেটোর সঙ্গে হাত মেলান। শুধু এখানেই নয়, উৎসাহীদের আবদার মেটাতে এ দিন মাঝেমধ্যেই থমকেছে ‘রোড-শো’।

খড়্গপুরের সালুয়াতে প্রবোধ পান্ডার সমর্থনে মিছিল (বাঁ দিকে)। প্রচারের শেষ লগ্নে মেদিনীপুর শহরে সন্ধ্যা রায় (মাঝে)। খড়্গপুরে প্রভাকর তেওয়ারির রোড-শো। ছবিগুলি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল এবং রামপ্রসাদ সাউ।

তৃণমূল যখন তারকাদের এনে বাজিমাতের চেষ্টা করছে, তখন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসংযোগেই ব্যস্ত ছিলেন মেদিনীপুরের বামপ্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা। প্রচারের শেষ দিনে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা চষে বেড়ান তিনি। সঙ্গী সিপিএমের স্থানীয় জোনাল সম্পাদক কমল পলমল। ভেটিয়া, সালুয়া প্রভৃতি এলাকায় যান। কোথাও মিছিল করেন। কোথাওবা পথসভা। প্রবোধবাবু বলেন, “বাম আমলে কী কিছুই হয়নি। অভিজ্ঞতা কী বলছে? রাস্তাঘাট হয়েছে। বিদ্যুৎ এসেছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। চাষিরা ফসলের দাম পেয়েছেন। আর এখন? সর্বত্র অরাজকতা চলছে।”

প্রচার শেষ। লড়াইটা কী সত্যিই কঠিন বলে মনে হচ্ছে না? বিশেষ করে একঝাঁক তারকার ‘রোড-শো’র পর? সিপিআইয়ের জেলা নেতা তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের জবাব, “আসলে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি ক্রমে সরছে। তাই ওরা তারকাদের নিয়ে এসে প্রচার জমানোর চেষ্টা করছে। সিনেমা- স্টারদের দেখতে ভিড় হয়ই। এটা নতুন কিছু নয়। মানুষের উপর আমাদের আস্থা আছে। মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।”

শেষবেলার প্রচারে সোমবার খড়্গপুরে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পাশেই মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজের সমর্থনে সভা করেন তিনি। বিমলবাবু ছাড়াও ছিলেন খড়্গপুরের প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল, ঘাটালের দলীয় প্রার্থী মানস ভুঁইয়া, জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া প্রমুখ। অধীরবাবু সভায় কড়া ভাষায় তৃণমূল ও বিজেপিকে আক্রমণ করেন। এই দুই দলের গোপন আঁতাঁত নিয়েও সরব হন। অধীরবাবুর কথায়, “আমরা জানি গট-আপ গেম হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর পার্টির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্টির ‘পুরানা রিস্তা’। সেই রিস্তাই দেখতে পাচ্ছি। নরেন্দ্র মোদীর মিটিংয়ের জন্য হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে অথচ, রাহুল গাঁধীর জন্য হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আসলে বিজেপি কথা দিয়েছে যদি সরকারে আসে তবে সারদা নিয়ে চিন্তা নেই।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, “আমরা বরাবর বলছি তৃণমূল ও বিজেপির সখ্য বহু পুরোনো। নির্বাচনের আগে ভোট ব্যাঙ্ক ঠিক রাখতে তাদের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিযোগিতা চলছে। আগামী দিনে লাড্ডু ভাগ হবে, মিঠাই-রসগোল্লাও ভাগ হবে। রাজনাথ সিংহ ও মোদীর খেলাটা কখনও গরম বলো, কখনও নরম বলো। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও হাতের বাইরে যেতে দিও না।”

১) বামেদের প্রচার ঝাড়গ্রামে। ২) কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল এগরার খেজুরদায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ এবং কৌশিক মিশ্র।

অন্য দিকে, জঙ্গলমহলেও শেষ লগ্নের প্রচারে ঝাঁপাল সবদলই। এ দিন নরেন্দ্র মোদীর মুখোশ পরে ঝাড়গ্রাম শহর-সহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেন বিজেপি কর্মীরা। পদযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী বিকাশ মুদি। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় ছুটেছে বিজেপির প্রচার-গাড়ি। সেখান গাড়ি থেকে নরেন্দ্র মোদী, রাহুল সিংহের রেকর্ড করা বক্তৃতা বাজানো হয়েছে। এ দিন কংগ্রেস প্রার্থী অনিতা হাঁসদা গাড়িতে চেপে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রোড-শো করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরের শিব মন্দির মোড়-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় পথনাটিকা এবং ঝুমুর গান ও নাচের মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচার হয়।

সাঁকরাইল ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও পথসভা করেন সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে। সিপিএমের প্রচার গাড়িও ছুটেছে বিভিন্ন এলাকায়। তাতে বেজেছে নির্বাচনী ঝুমুর গান ও গণসঙ্গীত। শেষ দিনে তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন নিজে অবশ্য প্রচারে বেরোননি। এ দিন ঝাড়গ্রামে দিনভর দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন উমা। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার নেতৃত্বে এ দিন লালগড়, কাঁটাপাহাড়ি ও রামগড়ে মিছিল ও পথসভা করা হয়। সর্বত্রই তৃণমূলের সুসজ্জিত প্রচার-গাড়ি পরিক্রমায় বেরিয়েছিল।

প্রচার-গাড়ি থেকে প্রচারমূলক ঝুমুর গান বেজেছিল...‘ভোটের কালে জোড়াফুলে ছাপ মারো দাদা সকলে...মা-বোনেরা বাঁধো জোট জোড়া ফুলে দাও ভোট...উমাদিদিকে জিতাও তোমরা সকলে’।

অন্য বিষয়গুলি:

vote campaign jose barreto tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy