ভাইয়ের হাতে রাখি পরাবে বোন। তার কতই না আয়োজন। ভাই-বোনের এই উৎসবকে হাতিয়ার করে জনসংযোগের সুযোগ হারাতে নারাজ রাজনৈতিক দলগুলিও। রবিবার তাই পথচারীদের রাখি পরিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দিতে ত্রুটি রাখল না কেউই।
সকাল থেকেই মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর কেন, প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও ছিল সাজ সাজ রব। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৎপরতা ছিল সব থেকে বেশি। প্রথমেই ধরা যাক বতর্মান শাসক দল তৃণমূলের কথা। শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটি এই উৎসব পালন করেছে। পথচলতি মানুষকে রাখি পরিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়েছে। কে ছিলেন না সেখানে? ২১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির রাখি বন্ধন উৎসবে হাজির ছিলেন দলের জেলা র্কাযকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী। আবার তৃণমূল কাউন্সিলর মৌ রায়ের রাখিবন্ধন উৎসবে জেলার প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। নেতাদের রাখি পরানোর পাশাপাশি পথচলতি মানুষকে রাখি পরিয়ে লাড্ডুও দেওয়া হয়। তৃণমূল পরিচালিত মেদিনীপুর পুরসভাতেও রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয় আড়ম্বরে। পুরপ্রধান প্রণব বসুকে রাখি পরিয়ে যার সূচনা হয়।
হৃদয়ের উৎসব। ১) মেদিনীপুরে রাখি পরিয়ে মিষ্টি বিলি করছেন পুরপ্রধান প্রণব বসু।
২) রিকশা চালককে রাখি পরিয়ে ভালবাসার বার্তা খুদেদের। ৩) পথচলতি এক ব্যাক্তির
হাতে রাখি পরিয়ে দিচ্ছেন মেদিনীপুর পুরসভার এক কাউন্সিলর রুক্কাইয়া খাতুন। সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ।
রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুব সংগঠনও পিছিয়ে ছিল না। ছাত্র পরিষদ হোক বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, এসএফআই - সকলেই সামিল হয়েছিল এই উৎসবে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “আমরা চাই, সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত হোক।” এসএফআয়ের সৌগত পণ্ডা বলেন, “আমরা চাই, সম্প্রীতির বন্ধন আরও বিশ্বাসযোগ্য হোক।” বিজেপির উদ্যোগেও এদিন পথচলতি মানুষের হাতে রাখি পরানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের জেলা শাখার উদ্যোগে এ দিন মেদিনীপুর কলেজ ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছিলেন জেলা শাখার সম্পাদক বিজয় পাল। শিশু সংগঠন বঙ্কিম স্মৃতি সব পেয়েছির আসরের উদ্যোগেও রাখীবন্ধন উৎসব পালিত হয়। আসর মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।
স্কুল কলেজের মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে ছিল না। হুমগড় চাঁদাবিলা হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তো আবার গাছের পাতা, ফুল, ঘাস সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে রাখি তৈরি করে। কিভাবে রাখি তৈরি করা হয় ছোটদের তা শিখিয়েও দেয়। তারপর একে অপরের হাতে বাঁধে। আজ অর্থাৎ সোমবার সেই সমস্ত রাখি আবার পরিয়ে দেওয়া হবে স্কুলের মধ্যে থাকা গাছগুলিতে। গাছের সঙ্গে মিত্রতা করতেই এই উদ্যোগ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ষন্নিগ্রাহীর কথায়, “যা মানুষকে পরানো হয় তা গাছকে পরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই বোধটাই জাগাতে চাইছি যে, গাছ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবেই তো সকলে গাছ লাগাবেন, গাছের প্রতি যত্ন নেবেন। নতুবা পরিবেশ টিকিয়ে রাখা দায় হবে যে।” জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগেও রাখিবন্ধন উৎসব পালিত হয়।
রাখিবন্ধন উদ্যাপিত হল পুলিশের উদ্যোগেও। রবিবার মহকুমা পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন থানায় রাখী বন্ধন অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও দলীয় কর্মী-সমর্থক ও পথচলতি মানুষের হাতে রাখি বেঁধে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়। এ দিন খড়্গপুর টাউন থানার পক্ষ থেকে শহরের ইন্দা মোড়ে রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর, এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল, আইসি দীপক সরকার। ওই অনুষ্ঠানে থানার মহিলা কনস্টেবলরা পথচলতি মানুষদের রাখি পড়িয়ে দেন। কেশিয়াড়ি থানার পক্ষ থেকেও কেশিয়াড়ি বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাড়ে পাঁচশো লাড্ডু বিলি করা হয়। উপস্থিত ছিলেন আইসি প্রবীর মুখোপাধ্যায়। নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেও বেলদায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে রাখি উৎসব পালিত হয়। উপস্থিত ছিলেন বিডিও লীনা মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মঙ্গল, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy