সৌমিক বেরা। —নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলের ছেলে যোগ-ব্যায়াম শেখাচ্ছেন চিন, জাপান, অষ্ট্রেলিয়ায়। তারই মধ্যে সময় করে বছরে অন্তত এক বার মাতৃভূমি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে ফেরা চাই তাঁর। ছোটবেলায় যেখানে ব্যায়ামের হাতেখড়ি, এখন সেই জাগ্রত সঙ্ঘ জিমন্যাসিয়ামে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেন নিজে। খুদেদের চোখে বুনে দেন নতুন স্বপ্ন। যোগ-ব্যায়ামের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করার স্বপ্ন দেখান যোগ প্রশিক্ষক সৌমিক বেরা।
তাঁর কথায়, ‘‘গ্রাম, মফস্সলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিভা থাকলেও বিশ্ব-বাজারে তা মেলে ধরার মতো মানসিক জোর থাকে না অনেকের। ইংরেজি বলতে না পারা বা আদবকায়দা নিয়ে অকারণে হীনমন্যতায় ভোগে লোকজন। অথচ একচিলতে হাসিতেই অনেক কথা বলে দেওয়া যায়।’’
সাফল্যের যাত্রায় পুরনো দিনের সংগ্রামের কথা মনে পড়ে যায় সৌমিকের। পারিবারিক সূত্রে ঝাড়গ্রাম শহরের জুবিলি মার্কেটে সাইকেল সারানোর দোকান তাঁদের। জেলা, রাজ্য, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইতালিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল তাঁকেও। চেয়ে-চিন্তে যদিও বা টাকার জোগাড় কিছুটা হয়েছিল, কিন্তু বিদেশ-বিভূঁয়ে কথা বলার লোক নেই একটা। বাসে উঠলে বিদেশি ভাষায় কথা বলতে হবে, এই ভয়ে এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট হাঁটতে হতো রোজ। সৌমিক বলেন, ‘‘আমার লক্ষ্য স্থির ছিল। অকারণ কে কী ভাবল, বলল—তা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। পরিশ্রম করেছি। আর ফল পেয়েছি।’’
গর্ব করে সাফল্যের কথা বলতেই পারেন সৌমিক। সিঙ্গাপুরে তাঁর সংস্থা ‘রিয়াল যোগা’র পাঁচটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কলকাতায় দু’টি কেন্দ্রে আড়াই হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী। অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান-সহ বিশ্বের বহু দেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে বেড়ান বছরভর। তারই মধ্যে ঘরে ফেরার সময় বাঁধা থাকে ঠিক। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে এসে ফের স্টেশনের পাশে ছোটবেলার ব্যায়ামাগারে এসেছিলেন সৌমিক। ছোটদের যোগ শেখানোর পরে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন, যোগের উপযোগিতা বোঝান। যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন নিজেকে। সৌমিক জানান, গ্রামবাংলার বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে যোগব্যায়ামে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজের সংস্থাতেই নিয়োগ করেছেন।
যোগ নিয়ে নানা ভাবনা রয়েছে সৌমিকের। কলকাতায় যোগ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ভাবছেন তিনি। যেখানে যোগ-ব্যায়াম নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। প্রাচীন যোগ-ব্যায়ামের সঙ্গে আধুনিক চিন্তা-ভাবনার সঙ্গত একান্ত জরুরি বলে মনে করেন সৌমিক। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ভাবছি। বিপুল এই কর্মকাণ্ডে সরকারি সাহায্য দরকার। আশা করি জঙ্গলমহলের ছেলেকে বিমুখ করবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy