ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী সোমবার জেলায় তিনি দু’টো সভা করবেন। বেলপাহাড়ি এবং কেশিয়াড়িতে। বেলপাহাড়িতে সভা হবে চিকিৎসক প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে। কেশিয়াড়িতে সভা হবে অভিনেত্রী-প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে। দলনেত্রীর সভা ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই জেলা তৃণমূলের অন্দরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দু’টো সভায় বিপুল মানুষের ভিড় হবে বলেও মনে করছেন নেতৃত্ব। সেই মতোই সব আয়োজন করা হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আগামী সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় আসবেন। ওই দিন তিনি বেলপাহাড়ি এবং কেশিয়াড়িতে সভা করবেন।” মঙ্গলবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একটি দল ওই দুই এলাকায় যান। সভাস্থল পরিদর্শন করেন। দলে ছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষও। প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে দলের কর্মসূচি সফল করার জন্য সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে।”
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর এই প্রথম জেলায় আসছেন দলনেত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই নেত্রীর কর্মসূচি ঘিরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। গত জানুয়ারিতে জেলায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার তাঁর প্রশাসনিক কর্মসূচি ছিল। আর এ বার রাজনৈতিক কর্মসূচি। গেল সপ্তাহে মেদিনীপুরে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। দলের ৩ প্রার্থীকে নিয়ে কর্মিসভা করেন। কর্মিসভা হয় মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। অবাঞ্চিত ভিড় এড়াতে প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সভায় ডাকা হয়েছিল ঘাটাল এবং মেদিনীপুর লোকসভা এলাকার কর্মীদের। এ নিয়ে জঙ্গলমহল এলাকার কর্মীদের অনেকের মধ্যে কিছুটা অভিমানও হয়। শেষমেশ অবশ্য ‘তারকা’দের ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানতে হয় নেতাদের। যাঁদের কাছে প্রবেশপত্র ছিল না, তাঁদেরও স্টেডিয়ামে ঢুকতে দিতে হয়। এ বার দলনেত্রী জেলায় এসে জঙ্গলমহল থেকেই তাঁর কর্মসূচি শুরু করছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি লোকসভা আসনের তিনটিতেই এ বার তৃণমূল এমন তিনজনকে প্রার্থী করেছে, যাঁরা প্রত্যক্ষ রাজনীতির লোক নন। অন্য ক্ষেত্রে অবশ্য প্রতিষ্ঠিত। ঘাটালে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা দেব অর্থাৎ, দীপক অধিকারী। মেদিনীপুরে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। আর ঝাড়গ্রামে উমা সরেন। যিনি পেশায় চিকিৎসক। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনই দখল করে বামফ্রন্ট। পরিবর্তনের হাওয়াও সুবিধে পাইয়ে দিতে পারেনি তৃণমূলকে। তিন প্রার্থীই রাজনীতিতে আনকোরা হওয়ায় তৃণমূলের মধ্যেও অসন্তোষের চোরা স্রোত রয়েছে।
জেলা তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, অন্তত একটি আসনে সাংগঠনিক কাউকে প্রার্থী করা যেত, তা হলে দলের নীচুতলার কর্মীরা আরও উৎসাহিত হতেন। কারণ, যতই তারকারা প্রার্থী হন, ভোট তো করাতে হবে নীচুতলার কর্মীদেরই। সদ্য ডাক্তারি পাশ করা ঝাড়গ্রামের প্রার্থী উমা সরেনকে তৃণমূলের অনেকেই চিনতেন না। জেলায় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর উমা কোন গোষ্ঠীর-পরিচিত, তা নিয়েও দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কলকাতার মিছিলে তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। এরপর দলের মধ্যে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, ঝাড়গ্রামের প্রার্থী গোষ্ঠীর-পরিচিত নন, দলনেত্রীর পরিচিত।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের অবশ্য দলের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে এতটুকুও অসন্তোষ নেই। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “দল যোগ্য মানুষদেরই প্রার্থী করেছে। জেলার মানুষ শান্তির পক্ষে। মানুষ আর হিংসার রাজনীতি দেখতে চান না। গত বিধানসভা-পঞ্চায়েত নির্বাচনে এটা প্রমাণিত। আমাদের তিনজন প্রার্থীই এ বার বিপুল ভোটে জিতবেন।” জঙ্গলমহলের জেলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী কী বার্তা দেন, কী রণকৌশল বাতলে দেন, এখন সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy