কলেজে ভর্তির খরচ কমানোর দাবি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলছিল পড়ুয়াদের। কিন্তু কলেজ কতৃর্পক্ষের তরফে আশ্বাস মেলেনি। শেষমেশ ফি কমানোর দাবিতে সোমবার, কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠক চলাকালীন কর্তৃপক্ষের সামনে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন কাঁথি দেশপ্রাণ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র। ওই ছাত্রকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছেন। তবে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ ডিসেম্বর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তির দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু কলেজের ভর্তি-সহ অন্যান্য খরচ কমানোর দাবি তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন কলেজের পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ওই ছাত্রও। আন্দোলনের জেরে সেই সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভর্তি প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সোমবার থেকে কলেজের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ দিন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের পরই কলেজ পরিচালন সমিতি ফের ওই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন। আর বৈঠক চলাকালীনই হঠাৎ ঘরে ঢুকে পড়েন বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র। কলেজের কোর্স ফি কমানো হয় নি কেন? এই প্রশ্ন তুলে আচমকাই কীটনাশক বের করে খেয়ে নেন তিনি। বিষয়টি বুঝেই আটকানো হয় তাঁকে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ছাত্রের বাবা পেশায় সব্জি বিক্রেতা, আর মা স্থানীয় একটি স্কুলে মিড ডে মিলের রাঁধুনি। বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। ছেলের এমন কাণ্ডের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্রটির মা মিনতি বেরা। তাঁর কথায়, “আমরা অন্ত্যোদয় যোজনা তালিকাভুক্ত। কষ্ট করেই সংসার চালাতে হয়। ছেলে বলেছিল, কলেজে ভর্তির জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা লাগবে। আমি দেড় হাজার টাকা দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু তাতেই যে এমন কাণ্ড করবে, ভাবতে পারিনি।” কাঁথি দেশপ্রাণ কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি শাখা রয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক তারাশঙ্কর পণ্ডার কথায়, “আমাদের কলেজে অনেক দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়ারা পড়তে আসেন। আমাদের দাবি ছিল, কলেজ কর্তৃপক্ষ যে কোর্স ফি ঠিক করেছেন তার থেকে এক হাজার টাকা কমানো। পরিচালন সমিতি বিষয়টি নিয়ে বারবার সভা করেও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তার জেরেই এমন ঘটনা।”
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় কাঁথি দেশপ্রাণ কলেজের। ইউজিসির অন্তবর্তী অনুমোদনের ভিত্তিতেই সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে যাবতীয় বিষয় চলছে। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কাঙালচন্দ্র দাস। তাঁর কথায়, “ইউজিসির অন্তবর্তী অনুমোদনের ভিত্তিতে কলেজটি চলছে। এমনকী কলেজের পড়ুয়াদের বেতন দিয়েই শিক্ষকদের বেতন মেটাতে হয়। তাই অন্যান্য কলেজের তুলনায় এই কলেজে খরচ কিছুটা বেশি। তবুও পড়ুয়াদের কথা ভেবে বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।” কলেজের টিচার ইন চার্জ রাজীব সরকার বলেন, “এ দিনের ঘটনা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তবে সোমবারের বৈঠকে কোর্স ফি ৫০০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ভতি প্রক্রিয়া হবে।”
এ দিকে এ দিনই কলেজে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজের ঘটনা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে ভর্তি করানো হয় নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। ইংরেজি অনার্সের ওই ছাত্রীর সঙ্গে কলেজেরই এক ছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ নিয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে অশান্তি হয়েছিল। অন্যান্য দিনের মত এ দিন ওই ছাত্রী কলেজে আসে। সঙ্গে ছিল বাড়িতে সব্জি চাষের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক। এ দিন কলেজের ছাত্র সংসদের অফিসের কাছেই একটি ফাঁকা ঘরের ঢুকে ওই ছাত্রী কীটনাশক খায় বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy