দিল্লিতে রোজই একটু একটু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে দূষণের মাত্রা। সোমবার তা ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে ধমক দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি এএসওকা এবং বিচারপতি এজি মাসিহ্র বেঞ্চ জানতে চাইল, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়া পদক্ষেপ করতে কেন এতটা সময় নেওয়া হল? কেন্দ্র এবং দিল্লির আপ সরকারকে এ-ও জানাল, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চতুর্থ পর্যায়ের ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (গ্র্যাপ-৪) বহাল রাখতে হবে। দিল্লিতে বাতাসের গুণমানের সূচক (একিউআই) যদি ৩০০-এর নীচে নেমে যায়, তা হলেও তাদের অনুমতি ছাড়া গ্র্যাপ-৪ তুলে নেওয়া যাবে না বলে সোমবার জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
গত কয়েক দিন ধরে দূষণে হাঁসফাঁস অবস্থা দিল্লিবাসীর। সোমবার সকাল ৯টায় সেখানে বাতাসের গুণমানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) ছিল ৪৮৫। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি এজি মাসিহ্র বেঞ্চ প্রশ্ন তুলল যে, একিউআই ৩০০-র গণ্ডি ছাড়ানোর তিন দিন পর কেন দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্র্যাপ-৩ চালু করা হল? তার আগে কেন কড়া পদক্ষেপ করা হল না? কেন্দ্রের আইনজীবী সওয়াল করে জানিয়েছেন, একিউআই নেমে যায় কি না, সে দিকেই নজর রাখা হয়েছিল। এর পরেই সুপ্রিম কোর্ট ধমক দিয়ে বলে, ‘‘একিউআই এক বার বৃদ্ধি পাওয়ার পর দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতেই হবে। গ্র্যাপ-৩ চালু করতে এত দেরি কেন হল? তিন দিন কী ভাবে অপেক্ষা করলেন?’’ বিচারপতিদের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘খুব স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, আমাদের অনুমতি ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্র্যাপ-৪-এর নীচে নামা যাবে না। একিউআই ৩০০-র নীচে নামলেও এই পরিকল্পনাই বহাল রাখতে হবে। এই নির্দেশেরই প্রস্তাব দিলাম।’’
আরও পড়ুন:
দিল্লি এবং এনসিআরে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চার স্তরীয় পরিকল্পনা রয়েছে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম)-এর। একেই বলে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (জিআরএপি)। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে এই সিএকিউএম। দিল্লিতে একিইউআই ‘খারাপ’ হলে গ্র্যাপ-১ চালু করা হয়। সে সময় রাস্তায় মাঝেমধ্যে জল ছেটানো হয়। বর্জ্য খোলায় জায়গায় পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়। একিউআই ৩০০-র গণ্ডি ছাড়ালে গ্র্যাপ-২ চালু করা হয়। এই পরিকল্পনা চালু করা হলে রোজ রাস্তায় জল ছেটানো হয়। জেনারেটরের ব্যবহার কমাতে বিদ্যুতের জোগান বৃদ্ধি করা হয়। নাগরিকদের নিজের গাড়ির ব্যবহার কমাতে পার্কিংয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। মেট্রো, ব্যাটারিচালিত বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। একিউআই ৪০০ ছাড়ালে গ্র্যাপ-৩ চালু করা হয়। সে সময় দিল্লি, এনসিআরে পাথর ভাঙা, নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস অনলাইনে চালু করা হয়। একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে গ্র্যাপ-৪ চালু করা হয়। যে সব গাড়ির নম্বর অন্য রাজ্যের, সেগুলি দিল্লির রাস্তায় চলতে পারে না। ব্যাটারিচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা নেই। এই পরিকল্পনা চালু হলে হাই স্কুল বন্ধ করে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়।