প্রশাসনিক স্তরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকা নিয়োগে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ এখনও দায়ের হয়নি। অথচ ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ফের তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য তথা দলের ব্লক যুব নেতা জগদীশ সরকার ও এক পঞ্চায়েত সদস্যের বড়িতে ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটল চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে। অভিযোগের তির তৃণমূলেরই একাংশ নেতা-কর্মীর দিকে। এর আগেও একই অভিযোগে শুক্রবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় তাঁরা। ব্লক সভাপতিকে হেনস্থা করারও অভিযোগ ওঠে।
বারবার এই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্বও। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই-সহ জেলা নেতৃত্ব চন্দ্রকোনায় এসে বৈঠক করেন। বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার কথা স্বীকার করে অমিতাভবাবু বলেন, “দলেরই একটি পক্ষ বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করছে। এতে দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “যেহেতু দলেরই নেতা-কর্মীরা নিয়োগ নিয়ে একটা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তাই এক্ষেত্রে দলীয় ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি, দল থেকেও তাঁদের বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি। দীনেনবাবু বলেন, “আলোচনা হয়েছে। এখনই এবিষয়ে কিছু বলব না।” তবে তিনি জানান, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্লক সভাপতিকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার রাতে তৃণমূলের ব্লক যুব নেতা তথা কমরপুরের বাসিন্দা জগদীশ সরকারের বাড়িতে দলের একাংশ নেতা-কর্মীরা চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। শনিবার রাতে ফের ভগবন্তপুর-১ পঞ্চায়েত সদস্য তথা চৈতন্যপুরের বাসিন্দা বদ্রুআলি খানের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। জগদীশ দাস, বদ্রুআলি খান বলেন, “এই নিয়োগ নিয়ম মেনেই হয়েছে। তবে দলের একাংশ কেন এমন ঘটনা ঘটাল, বুঝতে পারছি না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের ব্লক স্তরের কোর কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ, “নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ব্লকের ছ’টি অঞ্চলের সভাপতিদের কাছে নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। ব্লক নেতৃত্বের কথা অনুযায়ী, সব পঞ্চায়েত সভাপতিরাই নামের তালিকা তৈরি করে ব্লকে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তালিকা কয়েকটি নাম নেওয়া হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলের একাংশ অর্থের বিনিময়ে অন্যদের নিয়োগ করেছেন। এতে দলেরই অনেকে বাদ পড়ে গিয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন অনেক গরীব মানুষও।” তিনি বলেন, “ওই ঘটনার জেরেই দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।” দলের বিক্ষুব্ধ এক নেতারও বক্তব্য, “মেধার ভিত্তিতে এই নিয়োগ হলে কেউ কিছু বলত না। কিন্তু পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই অর্থের বিনিময়ে হয়েছে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গত সেপ্টেম্বর মাসে চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ৮৮ জন সহায়িকা কেন্দ্র নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট ১ হাজার ১৪৫ জন ওই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। শুক্রবার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের ব্লক অফিসে দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে এই নিয়োগ হয়েছে। এই নিয়োগের জন্য সাতজনের মনিটরিং কমিটি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কমিটিতে থাকা এক সরকারি আধিকারিক অভিযোগ করে বলেন, “নামেই আমরা ওই কমিটিতে ছিলাম। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের ইচ্ছা অনুযায়ীই যা হওয়ার হয়েছে।” বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিয়োগের প্যানেল বাতিল করে ফের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। দলে থেকেও যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। যদিও সহায়িকা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রোগ্রাম অফিসার অসিতবরণ মণ্ডল বলেন, “এবিষয়ে আমি সব শুনেছি। তবে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy