রাতারাতি ভোলবদল। মেহতাবের দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত অনেক জল্পনা উস্কে দিল।—ফাইল চিত্র।
রাজনীতিতে পা রাখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদল। বিজেপি ছেড়ে দিলেন প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার মেহতাব হোসেন। ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করে বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। কারও চাপে নয়, পরিবার-পরিজনের ভাবাবেগকে সম্মান জানাতেই তিনি বিজেপি ছাড়লেন বলে মেহতাব লিখেছেন। তবে অন্য কোনও দলে যোগ তিনি দেননি। জানিয়েছেন, রাজনীতিতেই থাকতে চান না। প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলারের এই রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদল বিজেপিকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। তবে মেহতাবকে আক্রমণ না করে নাম না করে তৃণমূলকেই নিশানা করেছে বিজেপি।
২১ জুলাই এক দিকে যখন শহিদ স্মরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল র্যালি চলছিল, তখন অন্য দিকে বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল কাঁপানো ফুটবলার মেহতাব হোসেন। একে ফুটবলার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়, তায় সংখ্যালঘু মুখ। এমন এক জনকে বেছে বেছে একুশে জুলাইতেই নিজেদের দলে সামিল করতে পেরে তৃণমূলকে কিছুটা ধাক্কাই দিয়েছিল বিজেপি। মেহতাব তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এমন নয়। কিন্তু রাজ্যে যে দলের শাসন এবং বিজেপিকে সংখ্যালঘু বিরোধী হিসেবে সব সময় প্রচার করে যে দল, সেই দলের সবচেয়ে বড় বাৎসরিক কর্মসূচির দিনে এ রাজ্যের এক জনপ্রিয় সংখ্যালঘু মুখকে নিজেদের দলে সামিল করতে পারা বিজেপির জন্য অবশ্যই বেশ ইতিবাচক হয়েছিল। কিন্তু গেরুয়া সংসারে টিকলেন না মেহতাব। রাত কাটতেই পিছু হঠলেন।
বুধবার মেহতাব হোসেন ফেসবুকে জানিয়েছেন, কেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেন ছাড়লেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। মেহতাব লিখেছেন, ‘‘যে মানুষগুলো আমাকে মেহতাব করে তুলেছিল, সেই মানুষগুলোর পাশে থাকার জন্যই আমার রাজনীতিতে প্রবেশ করার ইচ্ছা। মনে হয়েছিল, রাজনীতিতে এলে হয়তো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব। সারা পৃথিবীর এই খারাপ সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী বহু মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি , তবুও যেন একা পেরে উঠছিলাম না। চারিদিকে ওই অসহায় মুখগুলো আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। চারপাশের সংখ্যাটা রোজ বাড়ছে। তাই হঠাৎ করেই রাজনীতিতে যোগ দিই আমি।’’
মেহতাবের ফেসবুক পোস্ট।
আরও পড়ুন: লাদাখে তীক্ষ্ণ নজরদারি, বিশ্বের সবচেয়ে হালকা ও দ্রুতগতির ড্রোন পেল ভারতীয় সেনা
মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পতাকা নেওয়ার পরে মেহতাব বলেছিলেন, বিজেপিকে তিনি সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করেন না। অনেকে বিজেপি সম্পর্কে অনেক রকম নেতিবাচক কথা বলেন, কিন্তু দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর একেবারেই অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে— এমনই জানিয়েছিলেন মেহতাব। কিন্তু বুধবার তাঁর যে ফেসবুক পোস্ট সামনে এসেছে, তাতে মেহতাব জানিয়েছেন যে, তাঁর নিজের কোনও সমস্যা না থাকলেও তাঁর চারপাশের লোকজনের ‘ভাবাবেগ’-এ আঘাত লাগছে। সেই কারণেই তিনি বিজেপি ছাড়ছেন।
মেহতাব হোসেন লিখেছেন, ‘‘যাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমার রাজনীতিতে আসা, তারাই আমাকে অনুরোধ করে, আমি যেন রাজনীতিতে সরাসরি না যাই। মানে, কোথাও গিয়ে তাদের ভাবাবেগ যেন আমাকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে চাইছে না। তাদের কাছে আমি এখনও ফুটবলার, মিডফিল্ড জেনারেল।’’ স্ত্রী মৌমিতা এবং দুই ছেলে জিদান ও জাভির কথাও ফেসবুকে এ দিন লিখেছেন মেহতাব। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে তাঁরাও বিস্মিত বলে মেহতাব বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি চাই না আমার জীবনটা বদলে যাক। আমার পরিবার, মৌমিতা, জিদান, জাভি কেউই সমর্থন করেনি আমার আকস্মিকতা। ঠিক যে ভাবে সাধারণ মানুষ কষ্ট পেয়েছে, সে ভাবে ওরাও পেয়েছে। সকলকে নিয়েই তো আমার পরিবার। পরিবারের মুখগুলো কষ্ট পেলে আমিও ভেঙে পড়ি, এটাই স্বাভাবিক, এটাই জীবনের নিয়ম। আমার কাছে অন্য কোনও কিছুর থেকে ওই ‘মিডফিল্ড জেনারেল’ নামটা অনেক বেশি প্রিয়, অনেক বেশি আপন।’’
আরও পড়ুন: ‘সাংবিধানিক সঙ্কট’ বলছেন স্পিকার, রাজস্থান মামলা এ বার সুপ্রিম কোর্টে
বিজেপি ছাড়লেও বিজেপির প্রতি তাঁর কোনও ‘ঘৃণা’ নেই— ফেসবুক পোস্টে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মেহতাব। অন্য কোনও দলেও যে যোগ দিচ্ছেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলারের কথায়: ‘‘কারও প্রতি কোনও ঘৃণা নেই, রাগ নেই। বাইরের কেউ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্যও করছে না। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতেই সরে যাচ্ছি এই রাজনীতির ময়দান থেকে। যে ভাবে মানুষের পাশে থেকেছি, সে ভাবে ভবিষ্যতেও থাকব। আজ থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। আমার এই সিদ্ধান্তের জন্য আমার সকল শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’’
মেহতাবের এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তি বাড়লেও বিজেপি নেতৃত্ব কিছুটা রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন এই বিষয়টিতে। মেহতাবকে দায়ী না করে তৃণমূলকে দায়ী করেছেন আর এক প্রাক্তন ফুটবলার তথা বর্তমানে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘কাউকে চাপ দিয়ে তো আমরা দলে টানিনি। মেহতাব হোসেন এক জন অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ। তিনি নিজের ইচ্ছেতেই বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু কোনও সংখ্যালঘু মুখ বিজেপির মঞ্চে এসে দাঁড়াক, এটা অনেকের সহ্য হয় না। তিনি নামী ক্রীড়াবিদ হন বা সাধারণ মানুষ, তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করা শুরু হয়।’’ কে চাপ দিয়েছে? মেহতাব নিজে তো লিখেছেন, তাঁকে কেউ চাপ দেননি। বিজেপি অবশ্য সে কথা মানতে রাজি নয়। রাজু বলছেন, ‘‘চাপ তো অবশ্যই দেওয়া হয়েছে। চাপে রয়েছেন বলেই সে কথা মেহতাব বলতে পারছেন না। যে ভাবে হেমতাবাদের বিধায়কের পরিবারকে চাপে ফেলা হচ্ছে, এখানেও ঠিক সেই পথই নেওয়া হচ্ছে। এটারও তদন্ত হোক, সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy