লক্ষ্মীবারের বারবেলায় শুরু হয়ে গেল ‘ওয়ার্ম আপ’। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি শুধু সময়ের অপেক্ষা। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা আনাগোনা শুরু করে দিলেন। জমি মাপজোকের প্রক্রিয়াও শুরু হল। এর পরে গড়াবে বুলডোজার, ক্রেন। আওয়াজ তুলবে মাটি কাটার যন্ত্র।
দশ বছর আগেও পুজোর মুখে প্রশাসনের এই ‘ওয়ার্ম আপ’ দেখেছিল সিঙ্গুর। সেটা ছিল জমি নেওয়ার জন্য। তাতে বহু গ্রামবাসীর দীর্ঘশ্বাস এবং চোখের জল পড়েছে। এ বার কিন্তু গ্রামবাসীরা বলছেন— প্রশাসনের কাজে তাঁরাও হাত লাগাবেন। কারণ এ বার তোড়জোড় জমি ফেরত দেওয়ার। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরই যে কারণে উৎসব শুরু হয়ে যায় সিঙ্গুরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই নবান্নে ঘোষণা করেছেন টাটাদের প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত পুরো জমি চাষযোগ্য করেই ফেরত দেওয়া হবে। গ্রামবাসীরা তাই আনন্দিত।
প্রশাসনের তৎপরতা দেখে বাজেমিলিয়ার সত্যজিৎ মাঝি এ দিন বলেন, ‘‘আমার হারানো জমি আবার সবুজ হয়ে ফিরবে। স্বপ্ন বাস্তব হতে চলেছে। আনন্দ তো হবেই। প্রশাসনের কোনও কাজে লাগতে পারলে ভাল লাগবে।’’ টাটাদের প্রকল্পে সিংহেরভেড়ির বাসিন্দা বিষ্টুপদ দে’র সাড়ে চার বিঘা জমি গিয়েছে। সেখানে এখনও দাঁড়িয়ে টাটাদের পরিত্যক্ত কারখানার শেড। সেখান থেকে কী ভাবে চাষের জমি পাওয়া যাবে, তা নিয়ে বুধবার রাতেও সংশয়ে ছিলেন বিষ্ণুপদবাবু। বৃহস্পতিবার তিনিই বলছেন, ‘‘কংক্রিটের মেঝে ভেঙে কী ভাবে আমার জমি বেরিয়ে আসবে, তা নিজে সামনে দাঁড়িয়ে দেখব। আচ্ছা, প্রশাসন দেখতে দেবে তো! আমরা তো কাজে সাহায্য করতে পারি।’’ শুধু অনিচ্ছুকরা নন, একই রকম অভিব্যক্তি ইচ্ছুকদের গলাতেও। এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায় সকলেই এখন দাঁড়িয়ে পড়েছেন একই সারিতে।
শীর্ষ আদালতে রায় ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার মাঠে নেমে পড়ে হুগলি জেলা প্রশাসন। এ দিন বিকেল পর্যন্ত জমি ফেরতের সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। জেলাশাসক পবন বনশল এবং পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী এ দিন টাটাদের
প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে যান। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি জারি এবং জমির মাপজোকের জন্য আমিনদের আনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রকল্প এলাকার যাবতীয় নির্মাণ (পরিত্যক্ত বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, হিমঘর, সেরামিক কারখানা, ভবন) সরিয়ে দেওয়া হবে। তার জন্য বুলডোজার, ক্রেন, মাটি কাটার যন্ত্র-সহ সব ধরনের সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।
কিন্তু জমি আবার চাষযোগ্য হবে তো? কারও কারও এখনও সংশয় কাটেনি। সিংহেরভেড়ি শিবতলা এলাকার বাসিন্দা গোপাল মালিকদের মতো কেউ কেউ এখনও যেন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না, জমি আবার আগের চেহারায় ফিরে পাবেন! তাঁর কথায়, ‘‘ফেরত পেলে খুবই ভাল। একান্তই যদি ফেরাতে না পারে, সে ক্ষেত্রে টাকা দিলেও আপত্তি নেই।”
জমি ফেরত পাওয়ার অপেক্ষা না করে অনেক আগেই অবশ্য প্রকল্প এলাকার কিছু কিছু জায়গায় ধান চাষ শুরু করে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। বড় বড় জলায় মাছ ধরাও চলছিল। এ দিনও বাজেমিলিয়া এলাকায় প্রকল্পের ভাঙা পাঁচিল দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল জলায় পাট কাচা হচ্ছে। ঠিক যেন দশ বছর আগেকার চেনা ছবিটার এক টুকরো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy