Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
mukul roy

মুকুল-‘স্বস্তি’ পদ্মবনে! গেরুয়া শিবির কিন্তু অন্তরের ‘অস্বস্তি’ আড়াল করতে পারছে না

মুকুল রায় তৃণমূলে থাকার সময়ে বিজেপি-তে যেতে পারেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও কখনও এমন ভাবে উত্তর দিতে দেখা যায়নি তাঁকে।

মুকুল রায়।

মুকুল রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ২০:৫৬
Share: Save:

মুকুল রায় বিজেপিতেই থাকছেন। শনিবার নিজেই টুইট করে সেই খবর জানিয়েছেন মুকুল। আর তার পরে সেই টুইট-বার্তা রিটুইট করা শুরু হয়। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা থেকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলের কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য থেকে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী পর পর রিটুইট করতে থাকেন মুকুলের বার্তা। এটুকুই নয়, নড্ডা লেখেন, বিজেপি কর্মীদের জন্য অনুকরণযোগ্য নজির গড়েছেন মুকুল।

রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে এই টুইট-রিটুইট নিয়েই নানা প্রশ্ন ঘুরছে। অনেকেই বলছেন, মুকুল বিজেপি-তে থাকছেন না এমন কোনও কথাই তো তিনি প্রকাশ্যে বলেননি। রাজনৈতিক মহলে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল তা এড়িয়ে না গিয়ে মুকুল টুইট করলেন কেন? সে উত্তর অবশ্য মুকুল দিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে অনুমান ভিত্তিক জল্পনায় ইতি টানার আবেদন জানিয়ে শনিবার তিনি টুইটারে লেখেন, ‘রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে বিজেপি-র সৈনিক হিসেবে আমার লড়াই চলবে। আমি সকলকে কল্পনা আর অনুমান বন্ধ করার অনুরোধ করছি। আমার রাজনৈতিক পথ নিয়ে সংকল্পে অবিচল আমি’।

মুকুলকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা নতুন কিছু নয়। তিনি তৃণমূলে থাকার সময়ে বিজেপি-তে যেতে পারেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও কখনও এমন ভাবে উত্তর দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। বিজেপি থেকে ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার অনেক জল্পনাকেই ‘পাত্তা’ দেননি মুকুল। কিন্তু এ বার দিলেন। তবে কি এ বারের জল্পনাকে বিজেপি নেতৃত্বও গুরুত্ব দিচ্ছিল? এমন প্রশ্ন বিজেপি-র অন্দরেই। রাজ্য নেতাদের অনেকেই বলছেন, দলের অন্তরের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতেই নিজের থেকে জবাব দিয়েছেন মুকুল। আর সেটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিলীপ, শুভেন্দু, অমিতরা রিটুইট শুরু করে দেন। এক কদম এগিয়ে রিটুইটের পাশাপাশি নড্ডা লেখেন, ‘মুকুল রায়জির এই বক্তব্য খুবই প্রশংসাযোগ্য। এই বক্তব্য সবাইকে পথ দেখাবে এবং সব বিজেপি নেতার ক্ষেত্রে অনুকরণযোগ্য’।

সর্বভারতীয় সভাপতি এমনটা কেন লিখলেন তা নিয়ে শনিবার রাত থেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন রাজ্য বিজেপি-র একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, একজন কেন্দ্রীয় নেতা বিধায়ক হওয়ার পরে দলে থাকাটাই তো স্বাভাবিক। এটাকে এত বড় করে দেখানো হচ্ছে কেন? ওই নেতারা এমন প্রশ্নও তুলছেন, তবে কি দলত্যাগের সম্ভাবনা দেখছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও?

কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে জয়ী বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল শুক্রবার বিধানসভায় শপথ নেন। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা যে গেট দিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করেন, সেই গেট দিয়েই ঢোকেন মুকুল। তিনি এসে তৃণমূল পরিষদীয় দলের ঘরেও যান। সেখানে এক সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে যান শপথগ্রহণ কক্ষে। প্রোটেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায় শপথবাক্য পাঠ করানোর পরে অধিবেশন কক্ষে থাকা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় মুকুলকে। এর পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয়, মুকুল কি তবে তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন? জল্পনা আরও বাড়ে শুক্রবার দুপুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ডাকা বিধায়কদের বৈঠকে তাঁর গরহাজিরা।

এর পর থেকে রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি বিজেপি-র অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। জল্পনা তৈরি হওয়াতে ইন্ধন ছিল মুকুলেরও। শুক্রবার শপথগ্রহণের পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি এখন কিছু বলব না। যখন বলার হবে, তখন সাংবাদিকদের ডেকে নেব। মানুষের জীবনে এমন দু’একটা দিন আসে, যখন মানুষকে চুপ থাকতে হয়।” মুকুলের শনিবারের টুইট কিছুটা স্বস্তি দিলেও এখনও একটা বড় প্রশ্ন রয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। মুকুলের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, নিজেই বিরোধী দলনেতা হতে চাইছেন না ‘দাদা’। তবে কি বন্ধন-মুক্ত থাকতে চাইছেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড? এর পাশাপাশি অবশ্য রাজ্য বিজেপি-র একটা বড় অংশের দাবি, মুকুলকে নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নিজের এবং ছেলে শুভ্রাংশুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তিনি বিজেপি শিবিরেই থাকবেন। আগামী দিনে হয়ত সংগঠনের বড় দায়িত্ব নিয়েই।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC mukul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE