বরকত গনি খান চৌধুরী এবং মহম্মদ আবদুল গনি।
গনি ভাঙলেন ‘গনি মিথ’। এ বারের নীলবাড়ির লড়াইয়ে মালদহে কংগ্রেসের গনি মিথ ভেঙে খান খান করে দিয়েছেন মমতার গনি। একটু খোলসা করলে বলতে হয়, সুজাপুরের তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি মহম্মদ আবদুল গনি এবার ২৯২ জন বিধায়কের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জয়ের ব্যবধান ১,২৯,৬১৬। আর সেই সঙ্গেই গত কয়েক দশক ধরে বাংলায় চলে আসা কংগ্রেসের গনি মিথ ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। এ বারের ভোটে সুজাপুর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন গনি খানের ভাইপো তথা বর্তমান বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী। গত কয়েক দশক ধরে এই আসনটিতে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসছেন গনি পরিবারের সদস্যরাই। ১৯৭২ সালে এই আসন থেকে জিতেই রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন বরকত গনি খান চৌধুরী। পরে ১৯৮০ সালে মালদহ লোকসভা থেকে জিতে দেশের রেলমন্ত্রী হন তিনি। সেই সময় সুজাপুর ছিল তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আমৃত্যু মালদহ আসন থেকে সাংসদ ছিলেন গনি খান। তাঁর সূত্রেই মালদহের কোতোয়ালির খান চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে আত্মিক যোগ তৈরি হয়েছিল সুজাপুরের।
তাই বিভিন্ন সময়ে সুজাপুরের বিধায়ক হয়েছেন তাঁর বোন রুবি নুর, কখনও বিধায়ক হয়েছেন তাঁর ভাগ্নী মৌসম বেনজির নুর। আবার কখনও ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী, আর ঈশাও তাঁদের পরিবার সূত্রেরই সুজাপুরের বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু এ বারের ভোটে হাওড়ার জগৎবল্লভপুর থেকে প্রাক্তন বিচারপতি বিধায়ককে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সুজাপুরে জোড়াফুলের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। গত রবিবার ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতার গনি। আর বিরোধী কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা নিজের জামানতও রাখতে পারেননি। এমনকি তৃতীয় হয়ে বিজেপি প্রার্থীও জমানত খুইয়েছেন। তবে এই ফল গনি মিথে ভাঙন, বলে মানতে চাননি মালদহ জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম। এক সময় মৌসম নিজেই সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক হয়েছিলেন। তাঁর ব্যাখ্যায়, ‘‘ সামগ্রিক ফলাফলে মানুষ দিদির পাশে দাঁড়িয়েছেন। বরকত সাহেব নিজের সময় অনেক কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন মানুষ মনে করেছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-কে রুখতে পারবেন মমতাদিদি। যে ভাবে তিনি উন্নয়নের কাজ করেছেন,বিপদে আপদে পাশে থেকেছেন, তার ফল হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের মানুষ জিতিয়েছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘গনি মিথ ভেঙে গিয়েছে, এমনটা বলা ঠিক হবে না। বরকত সাহেব মালদহ জেলার জন্য অনেক কাজ করেছিলেন। আমরা ওঁর পরিবারের সদস্য, আমরাও ওঁকে দেখেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। তাই দুটো বিষয়কে এক করে দেখা উচিত হবে না। গনি মিথ ও ভোটের ফলাফল দু’টি ভিন্ন বিষয়। দু’টি বিষয়ের কোনও ভাবেই তুলনা চলে না।’’
সুজাপুরে রেকর্ড ভোটে তৃণমূলের জয় খানিকটা অপ্রত্যাশিতই ঠেকেছে প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘সুজাপুরের সঙ্গে বহরমপুরের ফলাফল মেনে নিতে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।’’ আর সর্বাধিক ভোটে জয়ী তৃণমূল বিধায়ক গনি বলছেন, ‘‘জীবনে যখন যে দায়িত্ব পেয়েছি, সেই দায়িত্বই ভাল ভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। তা সে বিচারপতির দায়িত্বই হোক, কিংবা রাজনীতিকের। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে সুজাপুরে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর আস্থার মর্যাদা দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy